প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গত শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলপন্থী অধ্যাপক সংগঠনের বৈঠক চলাকালীন তুলকালাম ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনের দাবিতে SFI-এর বিক্ষোভ শুরু হয়। শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেন পড়ুয়ারা। চালানো হল ভাঙচুর। দেওয়া হয় গো ব্যাক স্লোগান। গণ্ডগোলের মাঝে ঝড়ে রক্তও। যা নিয়ে তীব্র নিন্দা শুরু হয় রাজ্য রাজনীতির মঞ্চে। আর এই আবহে এবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের সঙ্গে জোর বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লেন আইনজীবি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
সূত্রের খবর, আজ অর্থাৎ শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলমালের ঘটনায় আগামী দিনে রাজ্যের হয়ে শুনানির সময় আরও বাড়িয়ে দেওয়ার আবেদন করতে হাইকোর্টে এসেছিলেন আইনজাবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee) ৷ কিন্তু সেই সময় বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের সঙ্গে ‘তর্কাতর্কি’ কাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি আর বাকবিতণ্ডায় পরিস্থিতি এতটাই গুরুগম্ভীর হয়ে যায় যে তারপরই এজলাসে মামলা না-করার শপথ নিয়ে হাইকোর্ট থেকে বেরিয়ে যান আইনজীবী কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়।
ঘটনাটি কী?
আসলে গত শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবকুপারের বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেছিল বিক্ষোভকারীরা। আর তাই নিয়ে মন্ত্রীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। কেন প্রোটোকল মেনে মন্ত্রীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে আদালত। আর সেই প্রসঙ্গে এদিন আদালতে কল্যাণবাবু দাবি করেন যে মন্ত্রীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার দায় শুধুমাত্র পুলিশের নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের। আর তার উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন তোলা হয় যে, “কেন প্রোটোকল অনুসারে মন্ত্রীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি। তাঁর নিরাপত্তায় যে কয়েকজন পুলিশ আধিকারিকরা ছিলেন ঘটনার সময় তাঁরাই বা কোথায় ছিলেন?”
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
কল্যাণের যুক্তি মানলেন না বিচারপতি
যদিও বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের প্রশ্নের জবাব দিতে ছাড়েনি আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ আমাদের মত রাজনৈতিক নেতারা অনেক সময় নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। আর গত শনিবারে বৈঠক ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের কর্মসূচি। তাই হয়তো পুলিশ আধিকারিকরা ভিতরে ঢোকেননি।” কিন্তু নিজের প্রশ্ন থেকে সরলেন না বিচারপতি ঘোষ। তিনি বলেন, “এসব যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়।” কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন পুলিশ আধিকারিকদের দায়িত্বের উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন “কলকাতা হাইকোর্টে লিগাল সেল কোনও মিটিং ডাকলে, সেখানে আমি গেলে যদি এমন হয়, তাহলে পুলিশ কী করবে!”
বিস্ফোরক মন্তব্য কল্যাণের
তখন বিচারপতি পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমি বুঝতাম, যদি ভিড় পুলিশকে ওভারপাওয়ার করে মন্ত্রীর কাছে পৌঁছোত। এখানে সেটা হয়নি। এখানে বৈঠকে বিক্ষোভ হয়নি। বৈঠক শেষে বেরিয়ে আসার পর হয়েছে।” আর তখনই নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে এজলাসে তারস্বরে চিৎকার শুরু করে দেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি ঘোষ এবং বলেন, “গঠনমূলক সমালোচনা গ্রহণ করতে না পারলে তো কোনও কথাই বলা যাবে না।” তখন কল্যাণ হাত জোড় করে বলেন, “আমি এই এজলাসে আর কখনও সওয়াল করব না।” এদিন নজিরবিহীন বাদানুবাদে শোরগোল পড়ে যায় আদালত চত্বরে।