সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: দিনের পর দিন যে হারে গরম বাড়ছে, তাতে মানুষের দম বন্ধ হওয়ার মত অবস্থা। ফ্যানের বাতাসে মিলছে না স্বস্তি, আবার এসির খরচ নাগালের বাইরে। আবার কুলার কিনতে লাগছে মোটা অঙ্কের টাকা। আর এই অবস্থায় এখন পুরনো পদ্ধতি যেন মানুষের কাছে আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
হ্যাঁ, আমরা মাটির পাত্রের এয়ার কুলারের (Mud Pot Air Cooler) কথা বলছি। ভাবতে অবাক লাগছে? আসলে স্বল্প মূল্যে অতি কম বিদ্যুৎ খরচে পরিবেশবান্ধব এই যন্ত্র দিনের পর দিন বিরাট জনপ্রিয়তা পাচ্ছে দেশের কোনায় কোনায়।
কেন এই কুলারের জনপ্রিয়তা বাড়ছে?
একদিকে তীব্র তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে বিদ্যুতের বিলের বোঝা, এই দুইয়ের কথা মাথায় রেখে এখন মানুষ বিকল্প পথ খোঁজা শুরু করেছে। মাটির পাত্রে ঠান্ডা রাখার প্রাকৃতিক গুণ সবাই আমরা কম বেশি জানি। আর সেই ধারাকে আধুনিক ছোঁয়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাটির এয়ার কুলার।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
তামিলনাড়ু, চেন্নাই, ব্যাঙ্গালুরুর মতো দক্ষিণ ভারতের বেশ কিছু জায়গায় এই কুলারের ব্যবহার অনেকদিন ধরেই চলছে। এবার দিল্লি, হায়দ্রাবাদ, এমনকি কলকাতার আশেপাশের এলাকাতেও মানুষজন এই কুলারের দিকে পা বাড়াচ্ছেন। কারণ এতে নেই কোন বিষাক্ত গ্যাস, নেই অতিরিক্ত বিদ্যুতের খরচ, শুধু সামান্য একটি ছোট ফ্যান হলেই চলবে।
কীভাবে কাজ করবে এই মাটির কুলার?
আসলে এই কুলারটি তৈরি করা হয়েছে একটি ছিদ্রযুক্ত কাদামাটির পাত্র দিয়ে, যার মধ্যে রাখা হবে জল। মাটির ছিদ্রপথে জল ধীরে ধীরে বাষ্পীভূত হবে এবং আশেপাশের গরম বাতাসকে শোষণ করে ঠান্ডা করবে। ফলে যে বাতাস বাইরে বেরিয়ে আসবে, তা হবে বরফের মতো ঠান্ডা।
সূত্র বলছে, পাত্রের মাথায় ছোট একটি বৈদ্যুতিক ফ্যান লাগানো থাকছে, যা গরম বাতাস ভেতরে টেনে ঠান্ডা বাতাস বাইরে বের করছে। আর চাইলে পাত্রের গায়ে একটি ভেজা কাপড় লাগিয়ে দিলে ঠান্ডা হবে আরও কনকনে। আর এই পদ্ধতি সিলিং ফ্যানের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর, বিশেষ করে ছোট রুমের জন্য সোনায় সোহাগা।
খরচ কত পড়বে?
বেশ কিছু সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এই মাটির এয়ার কুলারের দাম শুরু হবে হচ্ছে মাত্র 2600 টাকা থেকে। ছোট রুমের জন্য উপযুক্ত এই সিঙ্গেল ফ্যান মডেলটি। তবে যদি ডবল ফ্যান মডেল কিনতে চান, তাহলে পকেট থেকে খোয়াতে হবে 3900 টাকা মত। এছাড়া বড় মডেলটি পাওয়া যায় 6000 টাকার মধ্যে। এতে বিদ্যুতের খরচ হবে কম এবং ঘরও থাকবে ঠান্ডা।
কিছু সীমাবদ্ধতা থেকে যাচ্ছে…
দেখুন, প্রযুক্তির সব সময় কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। আর এই কুলারও তার ব্যতিক্রম নয়। সূত্র বলছে, এই কুলার শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য বেশি কার্যকর। বাংলার সব এলাকায় সমানভাবে কাজ না করলেও যেখানে আদ্রতা তুলনামূলকভাবে একটু কম, সেখানে এটি ভালো কাজ করবে। তবে জানালার পাশে বা খোলা জায়গায় রাখলে এর কার্যকরীতা অনেকগুণ বেড়ে যাবে। হয়তো এসির মত ঘর ঠান্ডা রাখতে পারবে না, তবে ভ্যাঁপসা গরমে অনেকটাই স্বস্তি দেবে, তা আশা করা যায়।
কোথায় পাওয়া যাবে এই কুলার?
এই বিশেষ কুলার দক্ষিণ ভারতে বেশ সহজলভ্য হলেও বাংলায় এখনো সেরকম ভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি। তবে অনলাইন শপিং এর মাধ্যমে কেনা যেতে পারে। এই মাটির কুলারের জন্য Amazon, Flipkart-এর মত কিছু সাইট বা কিছু ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে খোঁজ নিতে পারেন। এমনকি অনেকে ইউটিউব দেখে নিজেরাই বানিয়ে নিচ্ছে এই কুলার। তাই আপনিও চাইলে এই চাঁদিফাটা গরম থেকে মুক্তি পেতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।