স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ, বাদ গেল না বাংলাও! কী বলছে রাজ্য সরকার?

শ্বেতা মিত্র, কলকাতা: মার্চের গরমে কার্যত কালঘাম ছুটে যাচ্ছে দেশবাসীর। কেউ হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি যে এমনটা হবে। আরও গরম পড়লে একটা সমস্যা দেখা দেবে। আর সেটা হল ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়া। গরমের সময়ে যা কিনা গোদের ওপর বিষফোঁড়া হওয়ার সমান। এখন এসব মোকাবিলা করতে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এখন সকলের ঘরে ঘরে স্মার্ট মিটার (Smart Meter) চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ খাতকে আধুনিকীকরণের জন্য সরকার দ্রুত দেশজুড়ে বিদ্যুৎ স্মার্ট মিটার চালু করছে। অন্যদিকে এই স্মার্ট মিটার চালু করার বিরুদ্ধে গোটা দেশজুড়ে শুরু হয়েছে আন্দোলন।


গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন

Join Now

স্মার্ট মিটার ইস্যুতে দেশে আন্দোলন

স্মার্ট মিটার উদ্যোগটি সঠিক বিলিং এবং শক্তির অপচয় হ্রাস সহ অসংখ্য সুবিধার প্রতিশ্রুতি দেয়, তবুও এটি বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে। বাংলা, বিহার, গুজরাট, তামিলনাড়ু এবং অন্যান্য রাজ্যে স্মার্ট মিটার চালুর প্রতিবাদ করা হচ্ছে। এক রিপোর্ট অনুসারে, এখনও অবধি ১ কোটি ১৬ লক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও আরও ২২ কোটি ২০ লক্ষ অনুমোদন করা হয়েছে।

READ MORE:  South Bengal Weather: সরস্বতী পুজোর আগেই বাড়বে তাপমাত্রা! পশ্চিমী ঝঞ্ঝার দাপটে বৃষ্টির সতর্কতা একাধিক জেলায় | West Bengal Rain, Winter Forecasting

তবে সরকারের এই উদ্যোগকে এখনো অনেকেই ভালোভাবে নেননি সেটা বোঝাই যাচ্ছে। স্মার্ট বিদ্যুৎ মিটার হল ঐতিহ্যবাহী বিদ্যুৎ মিটারের একটি উন্নত সংস্করণ। পুরাতন মিটারের বিপরীতে, যেখানে ম্যানুয়াল রিডিং প্রয়োজন হয়, স্মার্ট মিটারগুলি ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ খরচ রেকর্ড করে এবং সরাসরি বিদ্যুৎ সরবরাহকারীদের কাছে ডেটা পাঠায়। এটি আরও সঠিক বিলিং নিশ্চিত করে এবং মিটার রিডিংয়ে মানুষের ত্রুটির ঝুঁকি দূর করে।


বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে

Join Now

স্মার্ট মিটারের মূল সুবিধা

ম্যানুয়াল ত্রুটির কারণে আর কোনও ভুল বিল আসবে না। গ্রাহকরা অ্যাপের মাধ্যমে তাদের বিদ্যুৎ ব্যবহার ট্র্যাক করতে পারবেন। স্মার্ট মিটারের কারণে মানুষের বিদ্যুৎ চুরি করা কঠিন হয়ে পড়ে। টেকনিশিয়ানদের বাড়িতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এটা হল প্রতিবাদের অন্যতম কারণ।  যাইহোক, নতুন এই ব্যবস্থা বিদ্যুৎ বিতরণ অপ্টিমাইজ করে ব্ল্যাকআউট প্রতিরোধে সহায়তা করে। কাগজের বিল কমায় এবং টেকসই শক্তি খরচে অবদান রাখে।

READ MORE:  Teacher Recruitment: রাজ্যে ফের শিক্ষক নিয়োগ, অজস্র পদে চাকরি দেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার | Government Of West Bengal Teacher Job

কেন বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন মানুষ?

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এতকিছু সুবিধা সত্ত্বেও কেন এই নিয়ে প্রতিবাদ হচ্ছে? অনেক গ্রাহক দাবি করেন যে স্মার্ট মিটার স্থাপনের পর তাদের বিদ্যুৎ খরচ বেড়েছে। ডিজিটাল মিটারে ম্যানুয়াল রিডিং বাদ দেওয়ায় মিটার পাঠকরা চাকরি হারানোর আশঙ্কা করছেন। তামিলনাড়ুর বিক্ষোভকারীরা যুক্তি দিচ্ছেন যে স্মার্ট মিটার বিদ্যুৎ সরবরাহ বেসরকারিকরণের দিকে একটি পদক্ষেপ। কিছু গ্রাহক নতুন মিটার দিয়ে তাদের বিল কীভাবে গণনা করা হয় তা বুঝতে অসুবিধা বোধ করেন। মিটারের অনিয়মিত রিডিং এবং হঠাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর গ্রাহকদের সন্দেহের উদ্রেক করেছে। তথ্য গোপনীয়তা এবং স্মার্ট মিটার হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে ।

পশ্চিমবঙ্গে চলছে আলোচনা

এদিকে ঘরে ঘরে স্মার্ট মিটার ইনস্টল করার বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠকে বসছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এক রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যে এ পর্যন্ত ১.২৫ লক্ষ স্মার্ট মিটার লাগানো হয়েছে। মূলত সরকারি দফতর ও সংস্থাগুলিতে।২০২১-এ তৎকালীন মুখ্যসচিব এইচ কে দ্বিবেদীর সঙ্গে বিদ্যুৎ দফতরের শীর্ষ-কর্তাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কোনও সম্মতি ছাড়াই রাজ্যের সব সরকারি দফতরে স্মার্ট মিটার বসানো হবে। তা বসবে সব সংস্থা ও নির্দিষ্ট সীমার ওপর বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গ্রাহকদের বাড়িতেও। চার-পাঁচটি বেসরকারি সংস্থা দরপত্র দিয়ে রাজ‍্যে স্মার্ট মিটার বসানোর বরাত পায়।

READ MORE:  গতবছরের তুলনায় বেশি, ২০২৫-এ কবে থেকে কতদিন পর্যন্ত গরমের ছুটি? দেখে নিন লিস্ট

রাজ্যে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সংগঠন অ্যাবেকা-র কর্তা সুব্রত বিশ্বাস জানান, গ্রাহক স্বার্থবিরোধী এই মিটার প্রায় সব রাজ্যই লাগাচ্ছে। বাংলায় বারাসত, মধ্যমগ্রাম, কল্যাণী-সহ শহরতলীর কিছু জায়গায় ব্যক্তিগত গ্রাহকের বাড়িতে তা লাগানোর অভিযোগ উঠেছে। বারাসত পুর এলাকার একাধিক গ্রাহকের দাবি, জোর করেই স্মার্ট মিটার বসানো হয়েছে। অথচ বিদ্যুৎ আইন ২০০৩ অনুসারে শুধু গ্রাহক চাইলেই তা বসানো যাবে।

কোন রাজ্যগুলি ইনস্টলেশনে এগিয়ে?

কিছু রাজ্য অন্যদের তুলনায় দ্রুত অগ্রগতি করছে। উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং মহারাষ্ট্র স্মার্ট মিটার গ্রহণকারীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়, যেখানে তামিলনাড়ু এবং গুজরাটের মতো রাজ্যগুলি স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছ থেকে প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে।

Scroll to Top