সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: এবার সাধারণ মানুষের উপর দাদাগিরি শুরু করেছে সিভিক ভলেন্টিয়ার (Civic Volunteer)। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। সম্প্রতি খড়দার গান্ধীনগর এলাকায় এক সিভিক ভলেন্টিয়ারের দাদাগিরির ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠছে, ধারের টাকা চাওয়াই একদল মহিলাকে মারধর করেছেন ওই সিভিক ভলেন্টিয়ার। এমনকি তাদের এমনও হুমকি দিয়েছে, “আরজি করের মতো ব্যবস্থা করে দেব।” এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত সিভিক ভলেন্টিয়ার সন্ত দেবনাথকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
ধারের টাকা চাইতে গিয়েই হুমকি
খড়দার গান্ধীনগরের একাধিক মহিলার কাছ থেকে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন ওই অভিযুক্ত সিভিক ভলেন্টিয়ারের স্ত্রী ডালিয়া মুখোপাধ্যায় ওরফে ডালিয়া দেবনাথ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ধারের টাকা শোধ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা শোধ করেনি। অবশেষে প্রতারিত মহিলারা একত্রিত হয়ে ডালিয়ার শ্বশুরবাড়িতে টাকা চাইতে যান।
সেখানে গেলে ডালিয়া দেবনাথ তাদের সঙ্গে প্রথমে দুর্ব্যবহার করেন। পরে ডালিয়ার স্বামী সিভিক ভলেন্টিয়ার সন্তু দেবনাথ মদ্যপ অবস্থায় মহিলাদের উপর আরো চড়াও হন। অভিযোগ ওঠে, তিনি সিভিক ভলান্টিয়ারের পোশাক পড়ে পুলিশের লাঠি দিয়ে তাদেরকে মারধর করেছেন। এর ফলে ৬ জন মহিলা আহত হয়ে পড়েন। এমনকি একজন ঘটনাস্থলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং পরে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
বাচ্চাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি
ভুক্তভোগীরা দাবি করছে, শুধুমাত্র মারধরই নয়। তাদেরকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজও করেছেন ওই সিভিক ভলেন্টিয়ার। এক মহিলা জানান, “আমার কাছ থেকে ব্যক্তিগত প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছে। টাকা চাইতে গেলে হুমকি দেওয়ার পর আমার বাচ্চাকে তুলে নিয়ে যাবে, এমন হুমকিও দেওয়া হয়। এমনকি ওর শাশুড়ি দরজার পিছন থেকে বটি নিয়ে কোপাতে আসে।”
অন্য এক মহিলা আওয়াজ তোলেন, “আমরা সবাই আমাদের লোনের সমস্ত টাকা নিয়ে ডালিয়াকে দিয়েছিলাম। টাকা ফেরত চাইতে গেলে আমাদের উপর কার্যত অত্যাচার চালাচ্ছে। এক মহিলার জামা পর্যন্ত ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি ওই সিভিক এও বলেছেন, ‘তোর স্বামী নেই, আমার সঙ্গে দোতালায় চল।’ এসব কথা শুনে আমরা সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।”
পুলিশ কী পদক্ষেপ নিল?
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখন এলাকার হাওয়া গরম। ভুক্তভোগীরা খড়দা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার বলেছেন, “আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। অভিযুক্তকে শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে পুলিশ তাকে তদন্ত চালাচ্ছে।” শনিবার দুপুরে ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে ধৃত সন্ত দেবনাথকে তোলা হলে বিচারক থেকে ৭ দিনের পুলিশি হেপাজতে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।”
সিভিক ভলান্টিয়ারের দাপটে স্থানীয়রাও আতঙ্কিত
এই ঘটনার পর খড়দার গান্ধীনগর এলাকায় ক্রমশ ভয় ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয়রা চাইছে, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। তাদের দাবি, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। যাতে ভবিষ্যতে কেউ সাধারণ মানুষের সঙ্গে এরকম আচরণ করতে না পারে। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, সিভিক ভলান্টিয়ারদের যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ কেন নেই? সরকারি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে এরকম আচরণ করছে, তাহলে নিরাপত্তার গ্যারান্টি কি সরকার দেবে? এখন দেখার বিষয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্ত কতদূর এগোয় এবং প্রশাসন কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।