একধাক্কায় ২০% শেয়ার পতন ইন্ডাসইন্ড ব্যাংকের, অন্য ব্যাংকগুলিও কি মুখ থুবড়ে পরবে?

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা পুরো ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। কখনো উত্থান, তো কখনও ধস। সম্প্রতি এমনই একটি ভয়ানক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে ইন্ডাসইন্ড ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা।

এক ধাক্কায় এই ব্যাংকের ২০ শতাংশ শেয়ার নেমে গেছে, যা বিনিয়োগকারীদের রাতের ঘুম কার্যত কেড়ে নিয়েছে। এই শেয়ার পতনের পিছনে আসলে কি কারণ রয়েছে এবং ভারতের ব্যাংকিং খাতের উপর কতটা প্রভাব পড়তে পারে, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ইন্ডাসইন্ড ব্যাংকের শেয়ার কেন এতটা পড়ল? 

১১ই মার্চ ইন্ডাসইন্ড ব্যাংকের শেয়ার এক লাফে ২০ শতাংশ নেমে গিয়ে ৬৫৯.৫৫ টাকায় পৌঁছেছে। এটি গত ৫০ সপ্তাহের মধ্যে সবথেকে কম, যা ২০২০ সালের পর ব্যাংকের সবচেয়ে বড় পতন। কিন্তু কি এমন ঘটল, যে বিনিয়োগকারীরা হঠাৎ এতটা ভয় পেল?

মূলত ব্যাংকের ডেরিভেটিভস পোর্টফোলিও সংক্রান্ত কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছিল, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক এই বিষয়টি নজরে আনতেই ব্যাংকের আর্থিক ব্যবস্থা নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

READ MORE:  TET উত্তীর্ণদের জন্য বড় সুখবর, হাইকোর্টের নির্দেশে নোটিশ জারি করল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ

ডেরিভেটিভস পোর্টফোলিও কী?

যারা শেয়ারবাজার সম্পর্কে খুব একটা বেশি জানে না, তাদের জন্য সহজ ভাষায় বলা যায়, ডেরিভেটিভস পোর্টফোলিও এমন এক ধরনের বিনিয়োগ ব্যবস্থা, যেখানে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে শেয়ারের দাম কেমন হতে পারে সেই অনুযায়ী ডিল করে থাকে। ঝুঁকি কমানোর জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ঠিকমতো পরিকল্পনা না করলে এটি বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। 

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের তদন্ত দেখা গেছে, ইন্ডাসইন্ড ব্যাংক অতীতে বিদেশি মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে খরচের হিসাব সঠিকভাবে দেখায়নি। যার ফলে ব্যাংকের মোট লোকসান হতে পারে আনুমানিক ১৬০০ থেকে ২০০০ কোটি টাকা। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে গেছে এবং তারা দ্রুত তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে ব্যাংকের শেয়ার আরো নীচের দিকে নেমে যাচ্ছে। 

READ MORE:  বন্ধ হয়ে গেল এই ব্যাঙ্ক, আগামী ৬ মাস গ্রাহকরা আর তাদের টাকা তুলতে পারবে না

মিউচুয়াল ফান্ডে বিরাট ধাক্কা

ইন্ডাসইন্ড ব্যাংকের এই শেয়ার পতনে সবথেকে বড় ধাক্কা লেগেছে মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। কারণ এক রাতের মধ্যে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর ৬০০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। HDFC মিউচুয়াল ফান্ডের ৩৫৬৪ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। পাশাপাশি SBI মিউচুয়াল ফান্ডের ৩৪৮ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। 

এছাড়া ICICI প্রুডেনশিয়াল মিউচুয়াল ফান্ডের ৩৭৭৯ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে সূত্রের খবর। ফেব্রুয়ারি মাসে যেখানে ৩৫টি মিউচুয়াল ফান্ডের হাতে থাকা ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য ছিল মোট ২০,৬৭০ কোটি টাকা, এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ১৪,৬০০ কোটি টাকায়। 

ইন্ডাসইন্ড ব্যাংকের ভবিষ্যৎ কী হবে?

২০১৯ সালে ইয়েস ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৩৪৯ টাকা থেকে একেবারে ১০ টাকায় নেমে এসেছিল। তখন এমনই একটি আর্থিক অসংগতির কারণে ব্যাংকের পতন হয়েছিল। এবার কি ইন্ডাসইন্ড ব্যাংকের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটতে পারে?

READ MORE:  মাত্র ₹490 টাকায় 50MP ক্যামেরার 5G স্মার্টফোন, Flipkart-এর অফার দেখে সবাই অবাক

বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, এই আশঙ্কা আপাতত নেই। কারণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ খুব দ্রুত এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার চেষ্টা করছে। তারা একটা নিরপেক্ষ আর্থিক সংস্থাকে দিয়ে অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা করাচ্ছে এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের সমস্ত নির্দেশ মেনে চলছে। 

বিনিয়োগকারীদের করণীয় কী?

যারা এই মুহূর্তে ইন্ডাসইন্ড ব্যাংকের শেয়ার কিনতে বা বিক্রি করতে চাইছেন, তাদের জন্য পরামর্শ হল, হঠাৎ আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেবেন না। কারণ ব্যাংকের আর্থিক কাঠামো এখনো যথেষ্ট মজবুত।

তাছাড়া লং টার্মে বিনিয়োগের জন্য চিন্তাভাবনা করুন। যদি শেয়ারটি পুনরুদ্ধার হয় তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে প্রচুর লাভ হতে পারে। তবে বিনিয়োগ করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে বিনিয়োগ করুন।

Scroll to Top