প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: পহেলগাঁও হামলার ঘটনায় গোটা দেশ জর্জরিত। আর এই হামলায় পাকিস্তান এর মদত রয়েছে এই সন্দেহে ভারত সরকারের তরফে একগুচ্ছ কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হল। সাফ জানিয়ে দেওয়া হল, ভারত ছাড়তে হবে পাকিস্তানিদের। বেঁধে দেওয়া হল সময়। এমনকি বাতিল করে দেওয়া হল পাকিস্তানিদের জন্য ‘সার্ক’ ভিসা। স্থগিত রাখা হল সিন্ধু জল চুক্তি (Indus Water Treaty)। কিন্তু জানেন কি এই চুক্তি স্থগিত রাখার আসল ইতিহাস সম্পর্কে? এক বাঙালি IAS অফিসারের জন্যই এমন বড় সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় সরকার।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
চিঠির ভিত্তিতেই চুক্তি স্থগিত!
সূত্রের খবর, গত ২৪ এপ্রিল, ভারতের জল শক্তি মন্ত্রকের সচিব দেবশ্রী মুখোপাধ্যায় পাকিস্তানের জল সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ আলি মুর্তজাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই বাঙালি IAS অফিসার কন্যার লেখা চিঠিতেই সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। সেই চিঠিতে স্পষ্ট লেখা রয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাস হামলা চালিয়ে ইসলামাবাদ চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। সব মিলিয়ে কূটনৈতিক ভাবে মিষ্টি ভাষায় কড়া বার্তা দিয়েছেন এই বাঙালি IAS অফিসার চিঠিতে।
কী লেখা ছিল চিঠিতে?
জানা গিয়েছে চিঠিতে সেই IAS বাঙালি অফিসার দেবশ্রী মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, “ আমরা দেখেছি যে পাকিস্তানের তরফে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ চালানো হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে এই অনিশ্চয়তা ভারতকে চুক্তির অধিকার ব্যবহারের অধিকার দিয়েছে। চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন ছাড়াও, পাকিস্তান চুক্তি পুনঃবিবেচনা করার অনুরোধে কোন উত্তর না দিয়ে এই চুক্তির লঙ্ঘন করেছে। তাই ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি অবিলম্বে স্থগিত করা হচ্ছে।” শেষ পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জবাবেই আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানকে জানিয়ে দেওয়া হল যে অবিলম্বে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করা হচ্ছে।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
কে এই দেবশ্রী মুখোপাধ্যায়?
কিন্তু জানেন কি কে এই আইএএস দেবশ্রী মুখোপাধ্যায়? কী তাঁর সম্পূর্ণ পরিচয়? বিভিন্ন সরকারি নথি অনুযায়ী জানা গিয়েছে, দেবশ্রী মুখোপাধ্যায় ১৯৯১ সালের ব্যাচের আধিকারিক ছিলেন। ১৯৬৮ সালে মধ্যপ্রদেশে জন্ম হলেও তাঁর মাতৃভাষা বাংলা। লাফবরো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি জল এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। কর্মজীবনে প্রথম কাজ শুরু হয় অরুণাচলপ্রদেশে। সেখান থেকে শুরু করে দিল্লি পুরসভা, গোয়ায় বিভিন্ন পদে থেকেছেন তিনি। এছাড়া পিএমও-তেও নিযুক্ত ছিলেন যুগ্ম সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব পদে।
বেশ ফাঁপরে পাকিস্তান
আইএএস দেবশ্রী মুখোপাধ্যায় ২০১৫ সাল থেকে কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে আছেন। এরপর জল শক্তি মন্ত্রকে ২০২০ সাল থেকে কাজ শুরু করেন। এরপর ২০২৩ সালে তিনি এই মন্ত্রকের সচিব হন। আর এই পদে তাঁর মেয়াদ ২০২৮ সাল পর্যন্ত রয়েছে। আর এই আবহে জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনায় তাঁর এই সিদ্ধান্ত সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। তবে তাঁর এই সিদ্ধান্তে বেজায় চাপে পড়েছে পাকিস্তান। কারণ পাকিস্তানের জিডিপির ২১ শতাংশই কৃষির ওপর নির্ভরশীল।
এদিকে পাকিস্তানে সেচের কাজে প্রয়োজন পরে সিন্ধু, চেনাব, ঝিলামের জল। যার ৪৫ শতাংশ কর্মজীবীর কর্মসংস্থানও হয় কৃষি খাতে। এই আবহে পাকিস্তান যদি সিন্ধুর জল থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে তাদের অর্থনীতিতে বড় রকমের প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে গতকাল রাত থেকে গোলাগুলি শুরু হয়েছে জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে। পাকিস্তানি সেনাদের তরফ থেকে কয়েকটি ভারতীয় পোস্টে এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ার খবর উঠে এসেছে। পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনা। হতাহতের কোনো খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।