প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে প্রায় ২৬ হাজার চাকরিপ্রার্থীর জীবনে এক ঘোর বিপর্যয় নেমে এসেছিল। ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগের গোটা প্যানেল বাতিল করে দেওয়ায় রীতিমত আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে এতজন শিক্ষক শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীরা। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে আত্মীয় স্বজনের সামনে মুখ দেখাতে তাঁরা দ্বিধা বোধ করছিল। গোটা রাজ্য জুড়ে উথাল পাথাল পরিস্থিতি চলছে। আর এদিকে চাকরি বাতিল নিয়ে যখন চারিদিকে বিক্ষোভ কর্মসূচি করছে চাকরিহারারা তখন নববর্ষের সকালে এক শিক্ষকের ঝুলন্ত দেহ মিলল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলিতে। ৪২ বছর বয়সী মৃত শিক্ষকের দেহ তাঁর ঘর থেকেই উদ্ধার হয়েছে। মিলেছে একটি সুইসাইড নোটও।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
ঘটনাটি কী?
কুলতলি (Kultali) থানা এলাকার মেরিগঞ্জ দু নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তেঁতুলবেরিয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রণব প্রতীব নাইয়া ২০১২ সালে শিক্ষক হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি শিক্ষকতা করেছিলেন মুর্শিদাবাদে। এরপর তিনি ২০২১ সালে বদলি হয়ে বাড়ির কাছে স্কুলে ট্রান্সফার হন। বাংলা পড়াতেন জয়নগরে টিএস সনাতন হাইস্কুলে। বিয়েও করেননি। বাড়িতে নতুন কাজ চলছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন ধরেই তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। কারও সঙ্গে সেই ভাবে মেলামেশা করতেন না। কথা বলতেন না। এমনকি কর্মক্ষেত্রেও তাঁর কোনো মন ছিল না। এমনকি স্কুল কর্তৃপক্ষেরও দাবি, নিয়মিত স্কুলেও যেতেন না প্রণব। ঠিকভাবে ক্লাস নিতেন না। পরিবারের সদস্যরাও জানাচ্ছেন, বেশ কয়েকদিন ধরেই বেশ দুশ্চিন্তায় ছিল প্রণব। ফোনও ঘাঁটতো সারাক্ষণ। কিন্তু, পয়লা বৈশাখের সকালেই সবটা বদলে গেল। নিজের বাড়ি থেকেই তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করল পুলিশ।
অবসাদে ভুগছিলেন প্রণব!
প্রণবের বাবা সুভাষচন্দ্র নাঁইয়া এই প্রসঙ্গে বলছেন, “আমার তো একটাই ছেলে। সারাক্ষণ তো ফোন ঘাঁটত। চাকরি বাতিল নিয়ে একাধিক খবর শুনছিল, দেখছিল। এমনকি ওইসব নিয়ে বেশ চিন্তাও করছিল। তখন আমরা ওকে বলতাম চাকরিটা তোর তো আছে, আগে যাক তারপর তো ভাববি, এখন কেন এসব ভাবছিস! কিন্তু তবুও এই কাণ্ড করে ফেলেছে।” এদিকে গোটা ঘটনা কুলতলি থানার পুলিশকে জানানো হলে সঙ্গে সঙ্গে সেই মৃত দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ঠিক কী কারণে প্রণব মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন এবং তা থেকে সুইসাইড করলেন তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
কী লেখা ছিল সুইসাইড নোটে?
পুলিশ প্রণবের ঘোর থেকে এই সুইসাইড নোটটি খুঁজে পেয়েছিল সেই নোটের মধ্যে লেখা ছিল, ‘‘ আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’’ মা-বাবাকে দেখাশোনার করার জন্য পরিবারের বাকি সদস্যদের অনুরোধও করেছেন ওই ব্যক্তি। এবং নিজের বডিটা প্রণব মেডিক্যাল কলেজে দান করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। তবে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত এই সুইসাইড নোটের অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। কথা বলা হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। এদিকে প্রিয় শিক্ষককে হারিয়ে শোকে কাতর স্কুলের পড়ুয়ারাও। দুঃখ প্রকাশ করেছেন সহকর্মীরাও।