প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: প্রতি বছর রাজ্য সরকারের তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলির একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের পড়াশোনার সুবিধার্থে ট্যাব কেনার জন্য টাকা দেয় সরকার। এই প্রকল্পের অধীনে এককালীন ১০ হাজার টাকা করে পান পড়ুয়ারা। আবেদনকারীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি সেই টাকা চলে যায়। স্কুলের মাধ্যমেই করা হয় আবেদন। অভিযোগ, গত বছর রাজ্যের অনেক পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টে ট্যাবের টাকা ঢোকেনি। বরং তা চলে গিয়েছে অন্য কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। আর তদন্তে নামতেই ধরা পড়ে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে অন্য রাজ্যের প্রতারকরা। তাই এবার সেই দুর্নীতি রুখতে বাংলার শিক্ষা পোর্টাল নিয়ে বড় উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
নয়া বিজ্ঞপ্তি জারি বিকাশ ভবনের
সূত্রের খবর, গত ৪ এপ্রিল বিকাশ ভবনের তরফ থেকে এক জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, এখন থেকে যে কেউ বাংলার শিক্ষা পোর্টালে (Banglar Shiksha Portal) ইচ্ছামতো লগ ইন করতে পারবেন না। তার জন্য দিতে হবে নির্দিষ্ট ওটিপি বা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড। যদি সেই ওটিপি নির্ভুল থাকে তাহলেই ‘তরুণের স্বপ্ন’ থেকে ‘কন্যাশ্রী’ যে কোনও সরকারি প্রকল্পের পোর্টালে ঢুকতে পারবেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও সেই বিজ্ঞপ্তিতে এও জানানো হয়েছে যে, লগ ইন করার সময় রেজিস্টার করা সংশ্লিষ্ট মোবাইল নম্বরেই একটি ওটিপি ঢুকবে। এই ওটিপি আসবে প্রধান শিক্ষকদের কাছে। যার ফলে কোনও সরকারি প্রকল্পের টাকায় তছরুপ কিংবা দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সেই দায় আর এড়াতে পারবেন না প্রধান শিক্ষকেরা।
তথ্য পাঠানোর নির্দেশ প্রধান শিক্ষকদের
আসলে গত বছর ট্যাব কাণ্ডের শিক্ষা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য সরকার। সেই সময় রাজ্য সরকারের ট্যাবের টাকা রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলির একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে না ঢোকার অভিযোগকে কেন্দ্রে করে উত্তাল হয়ে উঠেছিল রাজ্য-রাজনীতি। তাই সরকারি প্রকল্পের টাকা নয়ছয় রুখতে নেওয়া হল এই ব্যবস্থা। ইতিমধ্যেই সমস্ত জেলা স্কুল পরিদর্শকদের কাছে এই নির্দেশের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে। চলতি মাসের ১০, ২০ এবং ২৫ তারিখে নয়া ব্যবস্থা চালু করার জন্য এ বিষয়ে যাবতীয় তথ্য পাঠাতে হবে প্রধান শিক্ষকদের। জানা গিয়েছে প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে তথ্য হিসেবে পাঠাতে হবে প্রধান শিক্ষকের নাম, ফোন নম্বর এবং আধার নম্বর।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
সমস্ত নথি নির্ভুলভাবে সংগ্রহ করার পর এআই প্রযুক্তির সাহায্যে পোর্টালে নাম নথিভুক্তকরণ এবং পাসওয়ার্ড তৈরির কাজ করা হবে। সব শেষে জেলা স্কুল পরিদর্শক অনুমতি দিলে চালু হয়ে যাবে লগ ইনের নতুন পদ্ধতি। তবে এই নয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘ট্যাব-কাণ্ড নিয়ে দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পর এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। তবে উদ্যোগে দুর্নীতি আছে কিনা কিংবা সর্ষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে রয়েছে কি না, তারও তদন্ত হওয়া দরকার।’’
অন্যদিকে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলছেন, ‘‘ট্যাব কেলেঙ্কারির পর ভুল থেকে হয়তো শিক্ষা নিতে চাইছে রাজ্য। এর আগে নিজেদের ভুল ঢাকার জন্য প্রধান শিক্ষকদের উপর দায় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আদতে পোর্টালেই যে ত্রুটি ছিল, তা এখন স্বীকার করা হল! আশা করব এ বার জালিয়াতি কমবে।’’এবার দেখার পালা রাজ্য সরকার কতটা সরকারি প্রকল্পগুলির আর্থিক দুর্নীতি রুখতে পারে।
রাজ্য রাজনীতি, বিনোদন থেকে শুরু করে খেলা সংক্রান্ত নানা ধরনের খবরের লেটেস্ট আপডেট পেতে এখনই ফলো করুন আমাদের India Hood Bangla কে।