আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আধার কার্ড (Aadhaar Card) সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ। ব্যাংক থেকে শুরু করে মোবাইল, রেশন বা সরকারি পরিষেবা, সবকিছুতেই অপরিহার্য ডকুমেন্ট। আর সেই ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র এখন চুরি হয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি আধার সেন্টারের সরকারি কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে সাধারণ মানুষের গোপন তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলেই অভিযোগ উঠে আসছে। আর সবথেকে ভয়ংকর বিষয়, এই চক্র ছড়িয়ে গিয়েছে বাংলার অন্তত ৫০টি আধার কেন্দ্রে।
কীভাবে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে তথ্য?
উত্তরপ্রদেশের সম্বল জেলার পুলিশ সম্প্রতি আমরোহা ও বদাউন থেকে চারজন হ্যাকারকে অ্যারেস্ট করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করাতে সামনে আসে আসল তথ্য। আধার কেন্দ্রের কিছু অসাধু কর্মীর সহায়তায় তারা এই চক্র চালাচ্ছে। আর কম্পিউটারের ম্যালওয়্যার লুকিয়ে গ্রাহকদের বায়োমেট্রিক তথ্য, ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার, এমনকি চোখের স্ক্যান পর্যন্ত চুরি করে নেওয়া হচ্ছে।
দুয়ারে আধার নয়, বরং দুয়ারে হ্যাকার
এই চক্রের কাজের ধরন এখন আরো ভয়ংকর। তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশ্বাসের জন্য প্রথমে সুযোগ করে নিচ্ছে। এর জন্য দুয়ারে পরিষেবার ছদ্মবেশে গ্রামে গ্রামে গিয়ে আধার সংশোধনের নামে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করছে। আর বায়োমেট্রিক মেশিন এবং আই স্ক্যানার নিয়ে গিয়ে তারা বাড়িতে বাড়িতে হাজির হচ্ছে।
জানা যাচ্ছে, আধার আপডেটের সুযোগ নিয়ে তারা ২ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ তথ্য চলে যাচ্ছে ভুল ওয়েবসাইটে। এমনকি অনেকেই না জেনে সেই ভুল সাইটে গিয়ে নিজেরাই নিজের সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপডেট করে দিচ্ছে।
এই চক্রের মাথা কে?
তদন্তে উঠে এসেছে আশীষ কুমার নামের এক যুবকের নাম। যিনি একজন বি.টেক ড্রপ আউট। তাকে ধরা হচ্ছে এই গোটা চক্রের মাস্টারমাইন্ড। তার নেতৃত্বে নাকি তৈরি হয়েছে একটি ভুয়া আধার পোর্টাল। আর এটিকে দেখতে একেবারে ইউআইডিআই পোর্টালের মতোই।
বাংলায় চক্রের দাপট
জানা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, দক্ষিণবঙ্গ, উত্তরবঙ্গ সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে এই ভুয়া চক্রের জাল। রাজ্যে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ জন এজেন্ট সক্রিয় রয়েছে বলেই খবর। মূলত গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত মানুষজনকে টার্গেট করে রাখছে তারা। রাজ্যের গোয়েন্দারা ইতিমধ্যে কিছু নির্দিষ্ট আধার সেন্টারের তথ্য সংগ্রহ করেছে। আর সেখান থেকে নিয়মিত ডেটাও চুরি করা হচ্ছে।
সতর্ক থাকুন!
আধার কার্ড যেখানে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে প্রধান ডকুমেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়, আর এখন সেটি নিরাপত্তার হুমকিতে পরিণত হচ্ছে। তাই প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের সবারই সজাগ থাকা উচিত এবং সচেতন থাকা উচিত।