সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: ধর্ষণ (Rape) একটি শব্দ, যা এক হারহিম করা অভিজ্ঞতা এবং নারীর জীবনকে পুরো শেষ করে দিতে পারে। কিন্তু আজকের আর্টিকেলে আমরা এমন একটি মেয়ের কথা বলবো, যিনি ধর্ষকের শাস্তি নিজেই দিয়েছিলেন। হ্যাঁ, ধর্ষককে আটকাতে তিনি ধর্ষকের জিভ ১.৬ সেমি কামড়ে কেটে নিয়েছিলেন। আর তার সেই সাহসী পদক্ষেপ ইতিহাসের পাতায় তার নাম লিখে রেখেছে।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
৬০ বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার এক ঘটনা…
ঘটনাটি আজকের নয়। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ। তবে ১৯৬০ এর দশকে এই দেশ ছিল প্রবলভাবে পুরুষতান্ত্রিক। সেই সময় দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজে একটা রীতি প্রচলিত ছিল। “নারী ও শুকনো সামুদ্রিক মাছকে যেন প্রতি তিন দিনে একবার মারলে তবেই তারা ভালো হবে।” আর এই প্রবাদটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে, সেই সময় নারীদের কি চোখে দেখা হত।
ঘটনাটির কেন্দ্রে রয়েছে ১৮ বছরের এক যুবতী
সালটা ১৯৬৪। চোই নামের এক ১৮ বছরের কিশোরী একদিন বিকালে পথ দেখানোর জন্য এক অপরিচিত ছেলেকে সাহায্য করেছিল। কিন্তু সেই ছেলেই তার কাল হয়ে দাঁড়ায়। কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পরই সেই ছেলেটি হঠাৎ করে চোইকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে মাটিতে ফেলে দেয় এবং ধর্ষণের চেষ্টা করে।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
চোখের পলকে যেন অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছিলেন চোই। এমনকি ছেলেটি নাকি তার মুখে নিজের জিভ ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আর সেই মুহূর্তে আর কিছু না ভেবে সাহস করে ছেলেটির জিভ কামড়ে দেয় ছোয়ে। জানলে চমকে উঠবেন, এক কামড়েই ছিঁড়ে ফেলেন তার জিভের ১.৬ সেন্টিমিটার অংশ।
এর পর যা ঘটল তা আরো ভয়ংকর
এরপর ছেলেটি আদালতে অভিযোগ করে চোই এর বিরুদ্ধে। সে অভিযোগ জানায়, তাকে নাকি নৃশংসভাবে আঘাত করেছে চোই। আর আদালত কী করে? সেই সময়কার আইন ছিল নারীদের বিরুদ্ধে। আদালত ধর্ষণের চেষ্টাকে পাত্তা না দিয়ে মেয়েটির দোষ প্রমাণ করে তাকে ১০ মাসের জন্য জেলে ভরে দেয়। একজন সাহসী নারী যিনি নিজেকে মানুষরূপী পশুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করেছিলেন, তাকেই অপরাধী বলে শাস্তি দেওয়া হল।
৭৮ বছর বয়সে এসেও নিজের সম্মানের জন্য লড়ছেন..
চোই এখনো এই রায় বাতিল করার জন্য লড়াই চলাচ্ছেন। বহুবার তার আবেদন নিম্ন আদালতে খারিজ হয়ে যায়। অবশেষে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। গুনতে গুনতে তার বয়স ৭৮ এর ঘর পেরিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এই মামলাকে এখন গুরুত্ব দিয়ে আবার বাসানের নিন্ম আদালতে ফেরত পাঠিয়েছে। জানা যাচ্ছে এখন নতুন করে তদন্ত শুরু হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত
বেশ কিছু আইন বিশেষজ্ঞ মনে করছে, এই মামলাটি দক্ষিণ কোরিয়ার নারীর অধিকার এবং আইনের পরিবর্তনের নতুন দরজা খুলে দিতে পারে। ছোয়ে মালজা বলেন, “আদালতের একটি ভুল সিদ্ধান্ত আমার জীবনকে নষ্ট করে দিয়েছে। এখন সময় হয়েছে সেই ভুল শোধরানোর।“
এই ঘটনা শুধুমাত্র সাহসী নারীর গল্প নয়, বরং সমাজ ব্যবস্থার টনক নড়িয়ে দেওয়ার এক গল্প। দীর্ঘ ৬০ বছর পরে এসেও ছোয়ে মালজা আমাদেরকে শেখান, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। মুখে কুলুপ আঁটা যাবে না। কারণ সত্যের জয় সবসময়ই হয়।