সৌভিক মুখার্জী, কলকাতাঃ সম্প্রতি পাক সেনাবাহিনীর (Pakistan Army) উপর একের পর এক আক্রমণ চলছে। বিশেষ করে বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলার সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। বিদ্রোহী সংগঠন বেলুচ লিবারেশন আর্মি (BLA) একাধিক আক্রমণের দায় স্বীকার করছে। ফলে প্রতিবেশী দেশটির প্রতিরক্ষা খাত ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
এবার এই পরিস্থিতিতে বড়সড় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। জানা যাচ্ছে, মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ২৫০০ পাক সেনা চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন (Pak Army Resign)। হ্যাঁ একদম ঠিকই শুনেছেন। আফগানিস্তানের এক বহুজাগতিক সংবাদমাধ্যম এই দাবি করছে, যা নিয়ে এখন জল্পনা তুঙ্গে।
কেন পাক সেনারা চাকরি ছাড়ছেন?
পাকিস্তানের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা পুরো বিপর্যস্ত। সেনা সদস্যদের মৃত্যুর সংখ্যা দিনের পর দিন বাড়ছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থার ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। আর এই পরিস্থিতিতে অনেক সেনাবাহিনী তাদের জীবনকে রক্ষা করতে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমাচ্ছেন।
এখানেই শেষ নয়। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙ্গে পড়ার ফলে সেনারা পর্যাপ্ত বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছেন না। পাশাপাশি বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়ার মত অঞ্চলে বিদ্রোহীরা যেভাবে প্রতিনিয়ত হামলা চালাচ্ছে, বোমা বিস্ফোরণ করছে সেনাদের লক্ষ্য করে, তাতে তাদের জীবন টিকিয়ে রাখা দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে।
সেনারা পাড়ি জামাচ্ছেন বিদেশে
অনেক পাক সেনা ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ যেমন সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমিয়েছেন। তারা মনে করছেন, সেখানে তাদের জীবন অনেক বেশি নিরাপদ এবং বেতনও অনেক বেশি। এক প্রাক্তন পাক সেনার বক্তব্য, “এখন পাকিস্তানের সেনা থাকা মানে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে পা বাড়ানো। পরিবারের জন্য ভালো ভবিষ্যৎ করতে হলে মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করা সবথেকে সেরা বিকল্প।”
সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়ছে
পাক সেনাদের এই গণপদত্যাগ পাকিস্তানের সামরিক শক্তির উপর বড়সড় প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর মনোবল এমনিতেই একদিকে দুর্বল হয়ে পড়েছে, তার উপর যদি প্রতিদিন সেনারা চাকরি ছাড়তে থাকেন, তাহলে ভবিষ্যতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আটকানো সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
শুধু তাই নয়, সেনাদের মধ্যে বিদ্রোহের আশঙ্কাও দেখা যাচ্ছে। কারণ, অনেকে বলছেন, “আমরা শুধু মরতেই সেনাবাহিনীতে যোগ দিইনি। আমাদের জীবনের মূল্য পাকিস্তানকে দিতে হবে।”
সাম্প্রতিক হামলা
এই পরিস্থিতির মধ্যে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর বিভিন্ন হামলার খবর সামনে আসছে। যেমন সাম্প্রতিক বেলুচিস্তানে একটি ট্রেনে সেনারা যাত্রা করছিলেন। তখনই সশস্ত্র বিদ্রোহীরা সেই ট্রেনটিকে কার্যত হাইজ্যাক করে নেয় এবং সেনাদের উপর আক্রমণ চালায়। আর সেখানে বহু সেনা নিহত হন।
পাশাপাশি একটি সামরিক গাড়িবহরকে টার্গেট করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। যেখানে বহু সেনা হতাহত হন। এই ধরনের ধারাবাহিক হামলার ফলে পাক সেনাদের মনে আতঙ্ক জন্মাচ্ছে। তারা বুঝতে পারছেন যে, পাকিস্তান সরকার এবং সামরিক বাহিনী তাদের রক্ষা করতে পারছে না। তাই তারা মনে করছে, প্রাণ হাতে নিয়ে চাকরি করা সম্ভব নয়। সেজন্যই তারা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে।
পাকিস্তান সরকার কী বলছে?
এই বিষয়টি নিয়ে এখনো পাকিস্তানে সেনাবাহিনী বা সরকার কোন রকম ঘোষণা করেনি। এমনকি দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো এই বিষয়ে এখনো মুখ খোলেনি। বেশ কিছু সূত্র বলছে, এই গণ পদত্যাগ যদি চলতে থাকে তাহলে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ তলানিতে ঠেকবে।
পাকিস্তানের জন্য এটি এক বড় সংকেত। সেনারা যদি তাদের চাকরি ছেড়ে এভাবে বিদেশে পাড়ি জমান, তাহলে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কীভাবে চলবে? বেলুচিস্তানের বিদ্রোহীরা ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং সেনাবাহিনী দুর্বল হচ্ছে, যা পাকিস্তানকে ভবিষ্যতে ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে ঠেলে দিতে পারে।