সৌভিক মুখার্জী, কলকাতাঃ কলকাতার গর্ব মেট্রোরেলে এবার প্রশ্ন উঠছে যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে। চালকের তীব্র সংকটের কারণে কলকাতা মেট্রোর (Kolkata Metro) ভবিষ্যৎ সংকটের মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই নাকি ক্লাস ফোর হেল্পারদের মেট্রো চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে! এহেন পরিস্থিতি যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলছে।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
কলকাতা মেট্রোতে চালকের অভাব
একসময় কলকাতা মেট্রো ছিল দেশের অন্যতম নির্ভরযোগ্য পরিবহন ব্যবস্থা। কিন্তু বর্তমান সময়ে চালকের সংখ্যা তলানিতে ঠেকছে। সূত্র বলছে, কবি সুভাষ থেকে দক্ষিণেশ্বর রুটে মোট ৩৯৬ জন চালকের অনুমোদন থাকলেও বর্তমানে মাত্র ২১৬ জন চালকের উপর নির্ভর করে পরিষেবা চলছে। অর্থাৎ, ১৮০ জন চালকের অভাব থেকে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে। কারণ চলতি বছরের ৩১শে মার্চ আরও ১৩ জন চালক অবসর গ্রহণ করবে। নতুন চালক নিয়োগের এখনো কোনো রকম ঘোষণা করা হয়নি।
নতুন রুটেও চালক সংকট
কলকাতায় বর্তমানে চারটি নতুন মেট্রো রুট চালু করা হয়েছে। সেগুলি হল হাওড়া ময়দান – এসপ্ল্যানেড, শিয়ালদহ – সল্টলেক সেক্টর ফাইভ, কবি সুভাষ – হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং জোকা – মাঝেরহাট। কিন্তু এই নতুন রুটগুলির জন্য আলাদা করে চালক নিয়োগ করা হয়নি। ফলে নর্থ-সাউথ করিডোরের চালকদের দিয়ে সরাসরি অন্য লাইনে গাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। আগে কবি সুভাষ থেকে দক্ষিণেশ্বর রুটে প্রতিদিন ২৯০টি মেট্রো চলত। চালক সংকটের কারণে এখন সেটা কমিয়ে ২৬২টি করা হয়েছে।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
ক্লাস ফোর কর্মীদের দিয়ে ট্রেন চালনা
মেট্রো পরিষেবা চালানোর জন্য স্বাভাবিকভাবে প্রতিটি রেকে সামনে এবং পিছনে দুজন চালক থাকেন। কিন্তু চালক সংকটের কারণে ক্লাস ফোর হেল্পারদের স্বল্প প্রশিক্ষণ দিয়ে একাংশের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো এবং জোকা – মাঝেরহাট রুটে ইতিমধ্যেই এই পরিবর্তন গোপনে কার্যকর করা হয়েছে বলে অভিযোগ সামনে আসছে।
এক শীর্ষ মেট্রো কর্তা জানিয়েছেন, টানেলের মধ্যে যদি মেট্রো থেমে যায় বা কোন প্রযুক্তিগত ত্রুটি হয় বা দুর্ঘটনা ঘটে, তখন দ্রুত রেক উল্টোদিকে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেখানে দক্ষ চালকের পরিবর্তে অনভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান থাকলে যাত্রীদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে।
কেন মেট্রো চালকের সংকট?
২০১০ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে কলকাতা মেট্রো ভারতীয় রেলের ১৭তম জোন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। কিন্তু ২০১২ সালে রেল বোর্ড একটি নিয়ম চালু করে, যেখানে বলা হয়েছিল কলকাতা মেট্রো ভবিষ্যতে সরাসরি কোন চালক নিয়োগ করতে পারবে না। পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেল থেকে চালক সরবরাহ করা হবে। কিন্তু ব্যস্ততম এই দুটি রেল জোন থেকে চালক পাওয়া এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে। যার ফলে কলকাতা মেট্রোতে চালকের সংকট দেখা গেছে।
তাহলে সমাধান কোথায়?
কলকাতা মেট্রোর এই চালক সংকট কাটাতে অবিলম্বে নতুন চালক নিয়োগ করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। শিক্ষিত চালকদের দ্রুত নিয়োগ করতে হবে এবং বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। তার পাশাপাশি ক্লাস ফোর কর্মীদের পরিবর্তে দক্ষ চালকদের নিযুক্ত করতে হবে। নাগরিকদের যাতায়াত আরও নিরাপদ করতে এই সিদ্ধান্ত খুব দ্রুত নেওয়া প্রয়োজন। নাহলে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী মেট্রোর ভবিষ্যৎ সংকটের মুখে পড়তে পারে।