মেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য রাজ্য সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হল কন্যাশ্রী (Kanyashree scheme)। তবে সম্প্রতি এই প্রকল্পে জালিয়াতির অভিযোগ সামনে এসেছে। বিবাহিত মহিলারা ভুয়ো ডকুমেন্ট দিয়ে কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা তুলে নিচ্ছে। আর এর পেছনে নাকি রয়েছে ব্লকের কিছু কর্মী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের হাত।
কীভাবে ধরা পরল জালিয়াতি?
ঘটনাটি ঘটেছে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকে। ব্লকের বিডিও সোনাম ওয়াঙদি লামা যখন প্রকল্পের আবেদনের তথ্য যাচাই করতে গ্রামে গ্রামে গিয়েছিলেন, তখন এই জালিয়াতির পর্দা ফাঁস হয়। তিনি যখন আবেদনকারীদের বাড়ি গিয়ে ডকুমেন্ট খতিয়ে দেখেন, তখন তিনি চমকে ওঠেন। দেখা যায় ১৪টি আবেদনকারী আসলে বিবাহিত। এমনকি তাদের এক বা একাধিক সন্তানও রয়েছে। অথচ তারা কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পেয়ে যাচ্ছেন।
কীভাবে চলছিল এই প্রতারণা?
আসলে অনেক বিবাহিত মহিলা ভুয়ো অবিবাহিত সার্টিফিকেট বানিয়ে আবেদন করেছিলেন। এমনকি এই টাকা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ব্লকের কিছু অসাধু কর্মী এবং পঞ্চায়েতের ব্যক্তিরা, যারা অগ্রিম ২ থেকে ৫ হাজার করে টাকা নিয়েছিল পরিবারগুলির থেকে।
এক আবেদনকারী জানিয়েছেন, তার ভাইঝির বিয়ে হয়ে গিয়েছে ৩ বছর আগে। তার একটা সন্তান রয়েছে। তবুও ব্লকের কিছু লোক এসে ৫০০০ টাকা চেয়েছিল কিন্তু ৩০০০ টাকা দিয়েছে। একই ধরনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন শাবনাজ খাতুন। তারও বিয়ে হয়ে গিয়েছিল, পরে ডিভোর্স হয়ে যায়। তিনিও কন্যাশ্রীর জন্য আবেদন করেন এবং ব্লকের লোকজন এসে ৩৫০০ টাকা দাবি করেন, যা তিনি বাধ্য হন দিতে।
স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
এই ঘটনা নিয়ে জগন্নাথপুর হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহাবুদ্দিন জানিয়েছেন, কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য আবেদনকারীদের পঞ্চায়েত থেকে অবিবাহিত সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। স্কুল শুধুমাত্র সেই সমস্ত ডকুমেন্টগুলি কন্যাশ্রী পোর্টালে আপলোড করে। কিন্তু বিয়ের তথ্য গোপন করে প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করা হলে স্কুল প্রশাসন আবেদন বাতিল করে দেয়।
ব্লক প্রশাসনের পদক্ষেপ
এই ঘটনার পর বিডিও তাপস কুমার পাল জানিয়েছেন, ব্লকের কোন কর্মী যদি এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত থাকে বা তার হাত থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই এক ব্লকের কর্মীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়ে গিয়েছে।
এই প্রতারণার ঘটনা সামনে আসার ফলে প্রশাসন বাকি আবেদনপত্রগুলি পুনরায় খতিয়ে দেখছে। এর ফলে প্রকৃত উপভোক্তরা যেন প্রকল্পের সুবিধা পান আর কেউ জালিয়াতি না করে সেই বিষয়টিকে নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসন।