সহেলি মিত্র, কলকাতাঃ সকলের এখন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে পামবন সেতু (Pamban Bridge)। আর বালিয়াড়ি ঘেঁষে নয়, একদম সমুদ্রের বুকের ওপর দিয়ে ছুটবে ট্রেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে ভারতের প্রথম উল্লম্ব লিফট সমুদ্র সেতু পামবন উদ্বোধন করেছেন। এই নতুন রেলসেতুটি নিয়ে সারা দেশে আলোচনা চলছে। রাম নবমীর দিনে এটি জনসাধারণের উদ্দেশ্যে খুলে দেওয়া হয়। তারপর থেকে এই সেতু নিয়ে আলোচনা যেন থামছেই না। রেল মন্ত্রক জানিয়েছে যে এই সেতু ঐতিহ্য এবং নতুন প্রযুক্তির এক নিখুঁত মিশ্রণ। এই সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হলে আপনি আপনার চোখ ফেরাতে পারবেন না। জানা গিয়েছে, এই সেতুটি ৫৫০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
নতুন পমবন সেতুর বিশেষত্ব কী?
২.০৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুটি নানা দিক থেকেই বিশেষ। এতে ১৮.৩ মিটারের ৯৯টি স্প্যান এবং ৭২.৫ মিটারের একটি উল্লম্ব লিফট স্প্যান রয়েছে। এটি পুরাতন সেতুর চেয়ে ৩ মিটার উঁচু। এর ফলে বড় জাহাজগুলি সহজেই চলাচল করতে পারবে। এটি এতটাই মজবুতভাবে তৈরি করা হয়েছে যে রেল এবং সমুদ্র পরিবহন বছরের পর বছর নিরাপদ থাকবে। এটিতে পলিসিলোক্সেন পেইন্ট, উন্নত স্টেইনলেস স্টিল এবং ফাইবার রিইনফোর্সড প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। এটি এটিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য টেকসই করে তুলবে। এই সেতুর নির্মাণ নকশা এবং সার্টিফিকেশনের ক্ষেত্রে ভারতের প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে।
অনেকেই হয়তো জানেন তো আবার অনেকেই হয়তো জানেন না যে ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ সরকার পুরনো পামবন সেতু তৈরি করে। কিন্তু সামুদ্রিক বিপর্যয়, জোলো হাওয়ায় ওই সেতুর একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০২২ সাল থেকে সেখানে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর সকলের সুবিধার্থে তৈরি করা হল এক নতুন সেতু। জাহাজ চলাচলের জন্য ব্রিজটি আবার দুভাগে ভাগও হয়ে যাবে। এই দৃশ্য দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন সকলে।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
রামেশ্বরমের কিছু দর্শনীয় স্থান
নতুন তৈরি হওয়া এই সেতু একদিকে যেমন রামেশ্বরম তথা সমগ্র তামিলনাড়ুর কাছে গর্বের ঠিক সেভাবেই আজ আলোচনা করে নেওয়া যাক এই রামেশ্বরমে আর কী কী ঘোরার জায়গা রয়েছে।
রামানাথস্বামী মন্দির
রামানাথস্বামী মন্দির রামেশ্বরমের অন্যতম বিখ্যাত স্থান। এখানে ভগবান শিবের পুজো করা হয়। এই মন্দিরটি তার সৌন্দর্য এবং স্বীকৃতির জন্য পরিচিত। বলা হয় নাকি ভগবান শ্রী রাম নিজ হাতে এই মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন। এর পেছনের গল্পটি হল, ভগবান শ্রী রাম হনুমানকে শ্রীলঙ্কা থেকে শিবলিঙ্গ আনতে বলেছিলেন, কিন্তু তিনি আসতে দেরি করেছিলেন, তাই মাতা সীতা নিজের হাতে শিবলিঙ্গ তৈরি করেন। এরপর সেটি রামের দ্বারা পূজিত হয় এবং তারপরে সেখানে বিখ্যাত মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল।
ধনুষকোডি সমুদ্র সৈকত
ধনুষকোডি সমুদ্র সৈকত রামেশ্বরম দ্বীপের পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি বিখ্যাত সমুদ্র সৈকত। এই জায়গাটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। আপনি এখানে অনেক জল কার্যকলাপ উপভোগ করতে পারেন। ১৯৬৪ সালে, একটি ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় এখানে অবস্থিত পুরো গ্রামটিকে ধ্বংস করে দেয়। এই কারণেই এই গ্রামটিকে ভূতের গ্রামও বলা হয়।
রাম সেতু
রাম সেতু সেতুটি শ্রী রাম এবং তাঁর সেনাবাহিনী দ্বারা নির্মিত হয়েছিল, যার কথা আমরা সকলেই রামায়ণে শুনেছি। এই সেতুটি শ্রীলঙ্কার যুদ্ধের সময় নির্মিত হয়েছিল। বিশ্বাস করা হয় যে যখন বানরবাহিনী পাথরে শ্রী রাম লিখেছিল আর সেটি জলে ডোবেনি। এমনকি রামানাথস্বামী মন্দিরেও এমন কিছু পাথর রাখা রয়েছে যেগুলি নাকি জলে দিলে ডোবে না।
রামেশ্বরম কীভাবে পৌঁছাবেন?
বিমানপথে – মাদুরাই বিমানবন্দর হল রামেশ্বরমের নিকটতম বিমানবন্দর, যা রামেশ্বরম থেকে প্রায় ১৭৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর, আপনি ট্যাক্সি বা বাসে করে রামেশ্বরম পরিদর্শন করতে পারেন।
রেলপথে – রামেশ্বরম রেলওয়ে স্টেশনের অনেক বড় শহরের সাথে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। চেন্নাই, মাদুরাই, কোয়েম্বাটুরের মতো জায়গা থেকে ট্রেনে করে আপনি সহজেই রামেশ্বরম পৌঁছাতে পারবেন।
সড়কপথে – রামেশ্বরমের অন্যান্য শহরের সাথে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। ভারতের যেকোনো জায়গা থেকে আপনার গাড়ি বা বাসে করে সহজেই রামেশ্বরম পৌঁছাতে পারবেন।