প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বরাবরই ভালোবাসার শহর হিসেবে পরিচিত সকলের প্রিয় কলকাতা। কত ইতিহাস, কত সংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে এই শহর জুড়ে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই ইতিহাস এবং সংস্কৃতি যেন হারিয়ে যাচ্ছে। কয়েক মাস আগে শহরের রাস্তায় ট্রামলাইন রক্ষা করার কথা বলেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। এবং ট্রাম সংরক্ষণ নিয়েও রাজ্য সরকারকে কার্যত ভর্ৎসনা করেছিলেন প্রধান বিচারপতি। আর এই আবহে এবার মুর্শিদাবাদে বাংলার শেষ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার সম্পত্তি (Nawab Siraj Ud Daulah’s Property) সংরক্ষণ নিয়েও এবার রাজ্য সরকারকে তিরস্কার করলেন প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
সিরাজের সম্পত্তি রক্ষার্থে ব্যর্থ রাজ্য সরকার!
মুর্শিদাবাদ অঞ্চলকে ঘিরে একসময় রাজত্ব চালিয়েছিল মুঘলরা। বাংলার শেষ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার রাজত্ব ছিল সেখানে। যার দরুন নবাবের অনেক সম্পত্তি এখনও অন্তর্নিহিত রয়েছে ওই অঞ্চলে। কিন্তু দিনের পর দিন ভারতের এই সম্পদের সংরক্ষণ নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলছে অনেকে। আর সেই প্রশ্ন দ্বন্দ্বের জল গড়াল কলকাতা হাইকোর্টে। সম্প্রতি নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার সম্পত্তি সংরক্ষণ নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা হল। এই মামলায় আবেদনকারীর দাবি, মুর্শিদাবাদে সিরাজ-উদ-দৌলার সম্পত্তি ভাগিরথীর গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। সেগুলো রক্ষা করার কোনও উদ্যোগ রাজ্য সরকারের নেই।
রাজ্যকে তীব্র ভর্ৎসনা প্রধান বিচারপতির
সূত্রের খবর, সম্পত্তি সংরক্ষণের এই মামলা গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এর এজলাসে উঠে আসে। আর সেই মামলার শুনানিতে রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলল আদালত। সম্পত্তি সংরক্ষণে কেন সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না এই প্রশ্নের জবাব চাইল আদালত। আর এই প্রসঙ্গে উঠে এল রাইটার্স বিল্ডিং নিয়ে রাজ্যের পদক্ষেপ। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে প্রধান বিচারপতি পর্যবেক্ষণ, ‘হেরিটেজের জায়গায় বড় বড় হাইরাইজ বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে। পুরনো ইতিহাস রক্ষার পরিবর্তে তা ভেঙে ফেলা হচ্ছে!” তারপরেই ভর্ৎসনার সুরে বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমকে বলতে শোনা যায়, “যে কোনও কিছু ভেঙে ফেলা খুব সহজ। ৪৮ ঘণ্টায় ভেঙে ফেলতে পারবেন। কিন্তু ফেরাতে পারবেন না।”
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
কন্যাকুমারীর উদাহরণ দেয় আদালত
এই মামলায় সম্পত্তি সংরক্ষণ প্রসঙ্গে রাজ্যের সরকারি আইনজীবী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা মন্তব্য করেন। তিনি ওই সম্পত্তি প্রসঙ্গে বলেন, “ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি ১৭৫৮ সালে বাংলার শেষ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার সম্পত্তি নষ্ট করে ফেলেছিল। মাত্র ৯ বিঘা জমি ছিল। তাও ভাগিরথীর ভাঙনে চলে যাচ্ছে। বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ্যে আনার জন্য আমাকে এই বিষয়ে আরও সময় দেওয়া হোক। এরপরই মুর্শিদাবাদে সিরাজের সেই শেষ স্মৃতি রক্ষা করার কথা বললেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি।
আর পড়ুনঃ শ্রীরামপুর স্টেশনে অমৃত ভারত প্রকল্পে বাধা হকারদের! বিরাট নির্দেশ দিল হাইকোর্ট
রাজ্যকে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম বলেন, “যেটুকু ইতিহাস আছে, সেটা রক্ষা না করলে ৯ বিঘাও থাকবে না।” তখনই তিনি কন্যাকুমারীর সম্পত্তি সংরক্ষণের উদাহরণ দেন। শেষে সিরাজের ওই সম্পত্তি নিয়ে রাজ্যকে আগামী সপ্তাহের মধ্যে তাদের অবস্থান জানানোর নির্দেশ দেয় আদালত। পাশাপাশি আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াকে এই মামলার সঙ্গে যুক্ত করার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।