প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: দিনের পর দিন রাজ্যে একের পর এক দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমত মাথায় হাত পড়ছে রাজ্য সরকারের। রাজ্যে যেন পরিণত হয়েছে দূর্নীতির আখড়ায়। কখনও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, কখনও রেশন ব্যবস্থায় তো আবার কখনও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়। তবে এবার ঘটল আরেক ঘটনা। বাম জমানায় জারি হওয়া ১০০টি ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট বাতিল করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালত জানিয়েছে, ওই ১০০টি ডেথ সার্টিফিকেটের (Fake Death Certificates in WB) কোনও তথ্য নেই স্বাস্থ্য দফতরের কাছে।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
ঘটনাটি কী?
ঘটনা সূত্রে জানা গিয়েছে, মাধব চন্দ্র মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি ২০০০ সালে বাগডোগরায় মারা গিয়েছিলেন। এদিকে মৃত্যুর ৩ বছর পর তাঁর জমির উত্তরাধিকার কী হবে তা নিয়ে রীতিমত মামলা শুরুর হয়। ২০১৩ সালে এই জমির উত্তরাধিকার বিষয়ে মামলা করেন রেখা পাল নামে এক মহিলা। মামলা শুরু হতেই একের পর এক নানা তথ্য জমা পড়ে আদালতে। আর সেই তথ্যের ভিড়ে সকলের নজর কেড়েছিল মাধব চন্দ্র মণ্ডলের একটি ডেথ সার্টিফিকেট। যার মধ্যে লেখা ছিল যে তাঁর মৃত্যু হয়েছে ১৯৯৮ সালে। এই নিয়ে বিতর্কের পারদ চড়তে থাকে। তাই সত্যিটা আসলে কী তাই নিয়ে শুরু হয় খোঁজখবর।
তথ্য জানার অধিকার আইনে বেরিয়ে এল আসল সত্য
মাধব চন্দ্র মণ্ডলের মৃত্যুর আসল সময় জানতে এলাকায় খোঁজ খবর নেওয়া হতে থাকে। আর সেই সময় জানা যায় বাস্তবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে ২০০০ সালে। অর্থাৎ সেই ডেথ সার্টিফিকেটটি সম্পূর্ণ ভুয়ো। এদিকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল সেই ডেথ সার্টিফিকেটে সই করেছে বাগডোগরা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রবীর রায়। এরপরই তথ্য জানার অধিকার আইনে সত্যি খোঁজার চেষ্টা করেন মামলাকারী রেখা পাল এবং স্থানীয় এক সমাজসেবী গৌতম কির্তনিয়া। কিন্তু জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধকরণ দফতরের তরফে জানানো হয় ওই নির্দিষ্ট সার্টিফিকেটের নম্বরের কোনও তথ্য তাঁদের কাছে নেই।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
এদিকে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে মামলাকারী রেখা পাল এবং স্থানীয় এক সমাজসেবী গৌতম কির্তনিয়া এব্যাপারে কোনও নথি জমা পড়েছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তারাও জানিয়ে দেয় এমন কোনো তথ্য তাঁদের কাছে জমা পড়েনি। এর পর তাঁরা মাধববাবুর ডেথ সার্টিফিকেটের নম্বরের আগে ও পরে ৫০টি করে ডেথ সার্টিফিকেটের তথ্য জানতে চান। স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানানো হয়, সেব্যাপারেও কোনও তথ্য নেই তাদের কাছে। কিন্তু এদিকে এই প্রতিটি ডেথ সার্টিফিকেটে সই রয়েছে তৎকালীন পঞ্চায়েত উপপ্রধান প্রবীর রায়ের।
বাতিল করা হল ১০০ টি ডেথ সার্টিফিকেট
সবশেষে এই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই ওই ডেথ সার্টিফিকেটগুলি ভুয়ো এবং বাতিল ঘোষণার দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন গৌতম কীর্তনীয়া নামে এক ব্যক্তি। গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায়ের বেঞ্চ সব খতিয়ে দেখে ডেথ সার্টিফিকেটগুলি বাতিলের নির্দেশ দেন। এবং ১০০টি ডেথ সার্টিফিকেট বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ। তবে গৌতমবাবুর আশঙ্কা, এরকম আরও ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট রয়েছে রাজ্যে যে ডেথ সার্টিফিকেট ব্যবহার করে আত্মসাৎ হয়ে চলেছে কোটি কোটি টাকার জমি।
এই প্রসঙ্গে মামলাকারী গৌতম কির্তনীয়া জানিয়েছেন, “একটি ভুয়ো সার্টিফিকেট প্রায় একশো কোটির জমি হরফ করতে বানানো হয়েছিল। কিন্তু এদিকে বাকি সার্টিফিকেট কাদের ইস্যু করা হয়েছে জানি না। হয়তো আরও বড় কোনো কিছু আত্মসাৎ করার জন্য। পাসপোর্ট থেকে ভোটার, আধার কার্ড তৈরি করা, অনুপ্রবেশকারীদের নাগরিকত্ব দিতে, জমি দখল করতেই এর ব্যবহার হচ্ছে বলেই আশঙ্কা করছি।” এদিকে এই ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজ্য জুড়ে।