প্রীতি পোদ্দার, আগ্রা: জালিয়াতির বেড়াজালে আবদ্ধ গোটা জনজীবন। আসলে দিনের পর দিন যেভাবে সকলে সমাজ মাধ্যমের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে তাতে অনলাইন জালিয়াতি চরম আকার নিচ্ছে। তবে জালিয়াতি যে শুধু অনলাইনেই হচ্ছে তা নয় অফলাইনেও বেশ বেড়েছে। যা ইতিমধ্যেই সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি কেন্দ্রের এক স্বাস্থ্য প্রকল্প ‘জননী সুরক্ষা যোজনা’ (Janani Suraksha Yojana) এর ক্ষেত্রেও প্রতারকরা জালিয়াতির জাল বিছাল। জানা গিয়েছে মাত্র ৩০ মাসের মধ্যে ২৫ বার ‘সন্তান প্রসব’ করেছেন এক মহিলা। শুধু তা-ই নয়, ওই সময়ের মধ্যে পাঁচ বার বন্ধ্যাত্বকরণও করিয়েছেন তিনি। আর তাতেই নাকি মিলেছে ৪৫ হাজার টাকা। অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই। তাহলে সম্পূর্ণটা পড়ে নিন বিস্তারিত।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
ঘটনাটি কী?
সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশের আগ্রার ফতেহাবাদ কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে কৃষ্ণা কুমারী নামে এক মহিলার এই শারীরিক রিপোর্ট দেখে চোখ কপালে উঠেছে। আসলে প্রতি বছর কেন্দ্রীয় সরকার ‘জননী সুরক্ষা যোজনা’র মাধ্যমে গরীব গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভাবস্থায় নানা রকম সহায়তা করা হয়। এই প্রকল্পে গরিব-পিছিয়ে পড়া গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সরকারি হাসপাতালে সন্তান প্রসব ও বন্ধ্যাত্বকরণ করানোর আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। কিন্তু এবার এই প্রকল্পে দেখা গেল প্রতারণার ছায়া। উত্তরপ্রদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের এক অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায়, ফতেহাবাদের এক মহিলা কৃষ্ণা কুমারীর নাম ব্যবহার করে মাত্র আড়াই বছরে ২৫ বার সন্তান জন্ম ও ৫ বার বন্ধ্যাত্বকরণের নামে টাকা তুলেছে।
ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৫ জনকে
এছাড়াও সেই অডিট রিপোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে ওই ৩৫ বছর বয়সী কৃষ্ণা কুমারীর নামে জাল নথি ব্যবহার করে নাকি একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। এরপর সেই সকল অর্থ সরাসরি কৃষ্ণা কুমারীর নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়। যেহেতু এতবার টাকা ট্রানজাকশন হচ্ছে একটি অ্যাকাউন্টে তা দেখে সন্দেহ হয়েছিল অডিট টিমের। তাই জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ডিরেক্টর ডা. পিঙ্কি জোরওয়াল ঘটনাস্থলে পৌঁছন এবং তদন্ত শুরু করেন। তখনই তদন্তে উঠে আসে এই ভয়ংকর তথ্য। সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিছু অসাধু কর্মী এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। শুধুমাত্র একটি নাম ও একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এতদিন এই প্রতারণা চলে আসছে। প্রথমে জালিয়াতিরা সেই অ্যাকাউন্ট থেকে ৪৫,০০০ টাকারও বেশি টাকা তুলে নিয়েছিল। তদন্ত চালিয়ে ইতিমধ্যে ৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী-সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এবং গ্রেফতার করা হয়েছে ৩ জনকে।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
তবে অভিযুক্তদের মধ্যে চার জন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী এবং এক জন কৃষ্ণার গ্রামের এক যুবক। যাঁদের বিরুদ্ধে FIR করা হয়েছে তারা হল গৌরব থাপা, নীরজ অবস্থি, গৌতম সিংহ, আজহার আহমদ এবং অশোক কুমার। অন্যদিকে আগ্রার মুখ্য চিকিৎসা আধিকারিক ডা. অরুণ শ্রীবাস্তব কৃষ্ণার বয়ান রেকর্ড করেন। যেখানে কৃষ্ণা জানান, তিনি আলিগড় জেলার নাগলা কদম গ্রামের বাসিন্দা হলেও বর্তমানে স্বামীর সঙ্গে গুড়গাঁওয়ে থাকেন। তাঁর দুই ছেলে, একজন ২০১৪ সালে, অন্যজন ২০১৭ সালে জন্ম নেয়। এক এজেন্ট কৃষ্ণার নামে অ্যাকাউন্ট খোলেন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায়। কিন্তু তাতে কৃষ্ণার মোবাইল নম্বর যুক্ত করা হয়নি, ফলে টাকা জমা-খরচ সম্পর্কিত কোনও বার্তাও তিনি পাননি। দিনের পর দিন জালিয়াতি হয়েই চলেছে।