রায়দান স্থগিত! ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় কী পর্যবেক্ষণ করল সুপ্রিম কোর্ট?

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে একের পর এক নিয়োগ দুর্নীতি বিষয়ক মামলা নিয়ে নানারকম শোরগোল যেন লেগেই রয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। যার মধ্যে অন্যতম হল SSC নিয়োগ দুর্নীতি। গতবছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ২২ এপ্রিল স্কুল সার্ভিস কমিশন বা SSC এর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট এক ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেছিল। হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করে। যার ফলে একঝটকায় চাকরি চলে যায় ২৫,৭৫৩ জনের। শুধু তাই নয় চাকরি বাতিলের পাশাপাশি যাঁরা মেয়াদ-উত্তীর্ণ প্যানেলে চাকরি পেয়েছিলেন বা যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি করছিলেন তাঁদের বেতন ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়।


আমাদের সাথে যুক্ত হন

Join Now

এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশে রীতিমত মাথায় বাজ পড়ে চাকরিপ্রার্থীদের। তাই হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যেতে বাধ্য হয় রাজ্য সরকার। শুধু রাজ্য সরকার নয় পৃথক ভাবে মামলা করে রাজ্যের শিক্ষা দফতর, SSC এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তার পর সুপ্রিম কোর্টে চাকরিহারাদের কয়েক জনও দফায় দফায় মামলা করেন হাই কোর্টের নির্দেশে। গত বছর ৭ মে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ চাকরি বাতিল মামলায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয়। সেই বিষয়ে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছিল যে, যদি যোগ্য এবং অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের আলাদা করা সম্ভব হয়, তা হলে গোটা প্যানেল বাতিল করা ন্যায্য হবে না।

READ MORE:  ফের হ্রাস রান্নার গ্যাসের দাম, জানুন কলকাতার নতুন মূল্য

সুপ্রিম কোর্টে SSC মামলা!

এরপর প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় অবসর গ্রহণের পর শেষবার গত ২৭ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে SSC সংক্রান্ত মামলার শুনানি উঠেছিল। এরপর আজ এই মামলা ফের সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে ওঠে। ঠিক দুপুর ২ টোয় শুনানি শুরু হয়। আর এদিনও প্রথম দিনের মতোই যোগ্য অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের প্রসঙ্গ ওঠে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে কীভাবে যজ্ঞ প্রার্থীদের বাঁচানো যাবে, সেই নিয়ে কোনো উপায় বা দিশা দেখাতে পারেননি কোনও পক্ষের আইনজীবী। এছাড়াও ওঠে OMR শিট এর প্রসঙ্গ।

READ MORE:  ‘DA দিতে ২ লক্ষ কোটি টাকা খরচ!’ মমতাকে পাল্টা হিসেব বোঝালেন সরকারি কর্মীরা

সূত্রের খবর, এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে বলেন, “পঙ্কজ বনসলের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া OMR শিট নিয়েও আমরা সন্দিহান। কোন তথ্য আসল? কমিশনের নাকি পঙ্কজ বনসলের? বলতেই পারছে না কমিশন।” এদিকে কমিশনের এই কার্যকলাপে পুরো প্যানেল বাতিলের পক্ষেই সওয়াল করেন চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী। উল্টোদিকে CBI-এর আইনজীবী জানান “হাইকোর্টে স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং রাজ্য, কেউই স্পষ্ট করে অবৈধ চাকরি প্রাপকদের নির্দিষ্ট সংখ্যা বলতে পারেনি। প্রথমে NYSA-র কাছে যাওয়া হলেও সেখানে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।”

কী বলছে CBI এর আইনজীবী?

এছাড়াও CBI এর আইনজীবী আরও জানায় যে, “ আমরা Data Scantech-এর কাছে যাই। তারা তথ্য ডিলিট করে দিলেও আমরা টেকনিক্যাল সাপোর্ট এর মাধ্যমে ডিলিটেড তথ্য উদ্ধার করতে পারি। আমরা পঙ্কজ বনসলের কাছ থেকে তিনটি হার্ড ডিস্ক পাই। এমনকি পঙ্কজ বনসলের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য সম্পূর্ণ সঠিক। এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী যে বিতর্কিত চাকরিপ্রাপকরা সিবিআইয়ের কাছে থাকা OMR শিট খতিয়ে দেখেছেন তাঁরা কেউই বলেননি যে ওই ওএমআর তাঁদের নয়।” প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে এদিন মামলার শুনানি হয়। মামলায় সব পক্ষের বক্তব্য শোনেন বিচারপতিরা।

READ MORE:  উদ্দেশ্য ছিল মহাকুম্ভে গিয়ে পুণ্য স্নান, পথেই বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু ১০ পুণ্যার্থীর

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা CBI এর বক্তব্য শোনার পর সুপ্রিম কোর্ট জানায়, “ প্রধান সমস্যা হল চাকরিপ্রার্থীদের OMR শিট নেই। এদিকে পঙ্কজ বনসলের সংস্থা থেকে যে তথ্য মিলেছে তার সঙ্গে কমিশনের তথ্যের কোনো মিল নেই। কোনটি আসল এটা কেউ বলতে পারছে না। ফলে যোগ্য ও অযোগ্য বাছাই করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।” তাই আজও সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার কোনো সুরাহা করতে পারেনি। তাই শেষ পর্যন্ত রায়দান স্থগিত রাখলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। কীভাবে যোগ্য-অযোগ্যদের আলাদা করা সম্ভব তা বলবে ভবিষ্যৎ।

Scroll to Top