সৌভিক মুখার্জী, কলকাতাঃ লটারির টিকিট কেটে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন অনেকেই দেখে। কিন্তু সেই স্বপ্ন কখনো যে প্রতারণার ফাঁদ (Lottery Ticket Scam) হয়ে উঠতে পারে, তা যেন ভাবতেই পারেননি মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের সাধারণ মানুষ। একটি ভয়ংকর জালিয়াতি চক্র বিগত কয়েক মাস ধরে জাল লটারির টিকেট বিক্রি করে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করছিল। অবশেষে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন সেই প্রতারণায় যুক্ত ৫ জন অভিযুক্ত।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
কীভাবে চলছিল প্রতারণা?
সূত্র বলছে, একটি জনপ্রিয় লটারি সংস্থার নামে হুবহু নকল টিকিট ছাপিয়ে বিক্রি করা হচ্ছিল। মানুষ বিশ্বাস করত যে, তারা রাজ্য সরকার অনুমোদিত লটারির টিকিট কাটছে। কিন্তু যখন বিজয়ী নাম্বার ঘোষণা করা হতো, তখন প্রতারণার আসল সত্যি বেরিয়ে আসতো। আসলে প্রথম পুরস্কার হিসেবে ২০ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা পুরস্কারের লোভ দেখানো হতো, যেখানে রাজ্য সরকারের টিকিটে প্রথম পুরষ্কার কোটি টাকা। এমনকি জাল টিকিট কিনে বিজয়ী হলে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী ডিলারের কাছে পুরস্কারের কোনো অর্থ পাওয়া যেত না।
জালিয়াতি এখানেই শেষ নয়। যে বিক্রেতার কাছ থেকে টিকিট কেনা হতো সেখানেই পুরস্কারের টাকা দাবি করতে বলা হত। অন্য জায়গায় পুরস্কারের টাকা দেওয়া হবে না, এমনটাই দাবি করত তারা। এমনকি প্রতারকদের কমিশন থাকত অনেকটাই বেশি। তাই তারা আরো বেশি উৎসাহিত হয়ে এই কারবার চালিয়ে যাচ্ছিল। এভাবেই রঘুনাথগঞ্জ, সুতি, সামশেরগঞ্জসহ সহ আশেপাশের এলাকাগুলিতে ছড়িয়ে পড়েছিল এই ভয়ংকর জালিয়াতির ঘটনা।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
পুলিশের অভিযোগ এবং গ্রেফতার
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ গাড়িঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়েছিল। সেখানে কয়েকজন দুষ্কৃতী নকল লটারির টিকিট বিক্রি করছিল। পুলিশ তাদের কার্যত হাতেনাতে ধরে ফেলে। অভিযুক্ত যুবকদের নাম হল মোজাহার শেখ, মিনারুল শেখ, আরজু শেখ, মনিরুল শেখ এবং সানিরুল শেখ।
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ধৃতদের বাড়ি রঘুনাথগঞ্জ থানার বিভিন্ন গ্রামে। অভিযানের সময় তিন হাজারেরও বেশি জাল লটারির টিকিট এবং নগদ কয়েক হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার তাদের জঙ্গিপুর আদালতে তোলা হয় এবং পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানানো হয়েছে।
জাল লটারির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স
এই ঘটনা নিয়ে জঙ্গিপুর জেলা পুলিশের সুপার আনন্দ রায় জানিছেন, “লটারির টিকিট কারবারিদের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছি। প্রতিটি থানার এলাকায় নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে এবং এই অসাধু চক্রকে নির্মূল করার সবরকম ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করছি।”
এখন দেখার বিষয় এই বড়সড় জালিয়াতি চক্রের পিছনে আর কারোর হাত রয়েছে কিনা এবং যদি থাকে, তা পুলিশ খুঁজে বের করতে পারে কিনা। তবে এখন থেকে সাবধান হন। যদি কেউ লটারির নামে অতিরিক্ত লোভ দেখিয়ে টিকিট বিক্রি করার চেষ্টা করে তাহলে অবশ্যই স্থানীয় প্রশাসনকে জানান। কারণ বিপুল অর্থ জেতার লাভে সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়ার আগে সতর্ক থাকা ভালো।