সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: ভারতের রাজনৈতিক মহলের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ (Waqf Amendment Bill 2025)। এবার অবশেষে এই বিল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সবুজ সংকেতের পর আইনে পরিণত হল। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। এর ফলে সারাদেশে এই আইন কার্যকর করার প্রস্তুতির তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কী কী থাকছে এই সংশোধনী আইনে? কবে থেকে কার্যকর করা হবে এই আইন? জানতে হলে অবশ্যই প্রতিবেদনটি পড়ুন।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
কী এই ওয়াকফ সংশোধনী আইন?
যারা ওয়াকফ সম্পর্কে অবগত নন তাদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি, ওয়াকফ হচ্ছে একপ্রকার ইসলামিক দানকৃত সম্পত্তি, যা সাধারণত ধর্মীয় বা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করা হয়। এই সংশোধনী আইনের মূল উদ্দেশ্য হল, ওয়াকফ সম্পত্তির সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, বেআইনি দখল ও অপব্যবহারোধ করা এবং ওয়াকফ বোর্ডের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা। সরকার মনে করছে, এই আইন কোন ধর্মবিরোধী নয়। এমনকি মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের বিরুদ্ধেও নয়। বরং এটি মুসলিম মহিলাদেরকে তাঁদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ঠিক কী হয়েছিল সংসদে?
এই বিলটি ছয়মাস আলোচনার পর সংসদে পেশ করা হয়। তারপর একটি যৌথ সংশোধনীয় কমিটি গঠন করা হয়। এরপর লোকসভায় মোট ২৮৮ জন সাংসদ বিলটির পক্ষে ভোট দেন। কিন্তু ২৩২ জন আবার সাংসদের বিরোধিতা করেন। শুধু লোকসভায় নয়, রাজ্যসভায় ১২৮ জন সাংসদের পক্ষে ছিলেন এবং ৯৫ জন সাংসদের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। আর এই দুই কক্ষে বিলটি পাশ হওয়ার পরেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পাঠানো হয় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। অবশেষে রাষ্ট্রপতির সম্মতিতে এই আইনটি বাস্তবায়নের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
বিরোধী পক্ষের মনোভাব
ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা গিয়েছে। বেশ কিছু রাজনৈতিক এবং সামাজিক গোষ্ঠী এই বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হলো কংগ্রেস সাংসদ মোহাম্মদ জাভেদ, AIMIM সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড (AIMPLB) ইত্যাদি। তারা অভিযোগ তুলছে, এই আইন মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক এবং সংবিধানে দেওয়া মৌলিক অধিকারকে লংঘন করছে। এমনকি AIMPLB ইতিমধ্যে সারা দেশে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে কী বলা হচ্ছে?
বিরোধীদের আক্রমণ সত্ত্বেও সরকার মনে করছে এই আইন ধর্মীয় রঙে না রাঙিয়ে কেবলমাত্র ওয়াকফ সম্পত্তির সুরক্ষা এবং ব্যবস্থাপনার দিকেই নজর দেবে। এতে করে ওয়াকফ বোর্ডগুলির স্বচ্ছতা আরো বাড়বে এবং মহিলা ও প্রান্তিক মুসলিমরাও আরও সুরক্ষিত হবে।
তবে ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ কার্যকর হলে দেশের ওয়াকফ সম্পত্তি সংক্রান্ত বিতর্ক এবং অনিয়ম রোধ হবে, তা বলাবাহুল্য। তবে সুপ্রিমকোর্টে যেহেতু বিষয়টি এখনো বিচারাধীন রয়েছে, তাই এখনই এর বাস্তবায়ন নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। এখন আদালতের চূড়ান্ত রায় ও বাস্তব প্রয়োগের দিকেই সকল দেশবাসীর নজর।