এক অলাভজনক সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য রিপোর্টে, ভারতের গড় স্কোর ৫৭.৮, যা বিশ্বব্যাপী গড় ৬৩ এর থেকে সামান্য কম।
শুভ্রোদীপ চক্রবর্তী, কলকাতা: যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। গা ভাসাতে হবে সামাজিক ট্রেন্ড-এ। না হলে যে দলছুট হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। অগত্যা স্বাস্থ্যের তোয়াক্কা না করে স্মার্টফোন, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারে ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে ১৮-২৪ এর জেনারেশন। অন্য কারও বানানো ডিজিটাল অস্বস্তিতে বন্দী হয়ে পড়ছে যুবসমাজ। যার ফলস্বরূপ চাপ বাড়ছে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর। অবসাদে আছন্ন হয়ে পড়ছেন তারা। সম্প্রতি এ কথাই তুলে ধরল আমেরিকার স্যাপিয়েন ল্যাবসের একটি সমীক্ষা।
দায়ী করা হল, স্মার্টফোন, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার, পরিবেশগত বিষাক্ত পদার্থ এবং একাকীত্বের ক্রমবর্ধমান মহামারীকে। যা কার্যত ‘গুরুতর দুর্দশার’ দিকে ঠেলে দিচ্ছে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের। সম্প্রতি, ইন্টারনেট ব্যবহার করে এমন ৭৫ হাজারের বেশি ভারতীয় প্রাপ্তবয়স্কদের উপর একটি সমীক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রের একটি অলাভজনক সংস্থা স্যাপিয়েন ল্যাবস। সেখানেই এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির কথা প্রকাশ করা হয়েছে।
এই সমীক্ষার শিরোনাম “বিশ্বের মানসিক অবস্থা ২০২৪”। গ্লোবাল মাইন্ড প্রজেক্টের মাধ্যমে পরিচালিত সর্বশেষ মেন্টাল স্টেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রিপোর্টের ফলাফল প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। যেখানে ভারতীয় তরুণদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রবণতা সম্পর্কে বিশেষ আলোকপাত করা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে দুঃখের অনুভূতি, বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতা, অবাঞ্ছিত আবেগপ্রবণ চিন্তাভাবনা থেকে শুরু করে জ্ঞানীয় অসুবিধা পর্যন্ত নানা বিষয়।
প্রত্যেকটি মহাদেশের প্রাপ্তবয়স্কদের উপর করা হয়েছে এই সমীক্ষা, যাদের মূলত ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয়র সংখ্যা ৭৫,৮৯৫ জন।
ভাল আছেন ৫৫ ও তার বেশি বয়সীরা
১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের গড় মানসিক স্বাস্থ্যের ভাগফল (MHQ) যেখানে ২৭.৬, সেখানে ৫৫ বছরের বেশি বয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের গড় মানসিক স্বাস্থ্যের ভাগফল (MHQ) ১০২.৪। মানসিক, সামাজিক এবং জ্ঞানীয় মানসিক কার্যকারিতা পরিমাপ করে এই গড় মানসিক স্বাস্থ্যের ভাগফল বা MHQ। ২০০ পয়েন্টের MHQ স্কেলের মধ্যে ১০০ পয়েন্ট সুস্বাস্থ্য এবং চাঙ্গা মনকে নির্দেশ করে। এই ক্ষেত্রে ভারতের গড় স্কোর ৫৭.৮, যা বিশ্বব্যাপী গড় ৬৩ এর থেকে সামান্য কম।
কোথায় সমস্যা তরুণদের?
সমীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে, তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যে প্রধান সমস্যাগুলি রয়েছে, তা হল – দুঃখ এবং বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি, অবাঞ্ছিত আবেগপ্রবণ চিন্তাভাবনা এবং মানসিক নিয়ন্ত্রণ, স্থিতিস্থাপকতা এবং সম্পর্কের সাথে লড়াই।
স্যাপিয়েন ল্যাবসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান বিজ্ঞানী তারা থিয়াগারাজন বলেন, “এই মূল্যায়ন শুধু কমে যাওয়া সুখের ব্যাপারে নয়। সুখ হল মনের স্বাস্থ্যের একটি ক্ষুদ্র উপাদান মাত্র, এটি বরং জীবনের চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা, চিন্তাভাবনা এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ, বিপর্যয় থেকে পুনরুদ্ধার এবং ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় মূল মানসিক ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কিত অধ্যায়ন।”