সৌভিক মুখার্জী, কলকাতাঃ রাজ্যের মহিলাদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী চালু করেছিল লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্প (Lakshmir Bhandar Scheme)। উদ্দেশ্য ছিল, মহিলারা যেন নিজের খরচ নিজেরাই চালাতে পারেন। ছোটখাটো খরচের জন্য স্বামী বা সন্তানের কাছে হাত পাততে না হয়। তবে এবার সেই সরকারি প্রকল্পের টাকাও হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল। হ্যাঁ একদম ঠিকই শুনছেন।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু ক্যানিং মহকুমার ঘুটিয়ারিশরিফের বাসিন্দা আকলিমা গাজিকে নিয়ে। পেশায় তিনি একটি ফুটপাতের হোটেলের রাঁধুনি। সীমিত উপার্জনের কারণে ঠিকভাবে সংসার চলে না। তাই লক্ষ্মীর ভান্ডারই তার একমাত্র ভরসা। কিন্তু প্রতি মাসেই তার পাওনা ১০০০ টাকা থাকে ৩০০ টাকা করে উধাও হয়ে যায়। অর্থাৎ, তিনি হাতে পান মাত্র ৭০০ টাকা।
সাইবার ক্যাফে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ
TV9 এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আকলিমা অভিযোগ করেন, তিনি স্থানীয় একটি অনলাইনের দোকান অর্থাৎ সাইবের ক্যাফে গিয়ে প্রতি মাসে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা তোলেন। কিন্তু দোকানদার তার কাছ থেকে প্রতি লেনদেনের সময় ৩০০ টাকা করে কেটে নেন। অর্থাৎ, তার হাতে ৭০০ টাকা ধরিয়ে দেন। আর এই টাকা কোথায় যাচ্ছে তার কোন হিসাব নেই।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
আকলিমা জানান, “আমি অনলাইন থেকে টাকা তুলি। প্রত্যেক মাসে আমাকে ৭০০ টাকা করে দেয়। বলে ৩০০ টাকা কেটে নিচ্ছে। কোন মাসেই আমাকে ১০০০ টাকা দেয় না। এই মাসে তো পুরো টাকাটাই কেটে নিয়ে বলেছে তোমার অ্যাকাউন্টে ১৪ টাকা রয়েছে।”
আসল ঘটনা কী?
এরপর তিনি অন্য জায়গায় গিয়ে চেক করে জানতে পারেন ৭ তারিখেই তার অ্যাকাউন্ট থেকে লক্ষ্মীর ভান্ডারের পুরো টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার হাতে কোনরকম টাকা পৌঁছায়নি। এই নিয়ে তিনি দোকানদারের কাছে যখন প্রশ্ন করেন, তখন প্রথমে তাকে জালিয়াতির প্রমাণস্বরূপ ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখানো হয়। পরে বিষয়টি চেপে যেতে বলা হয়। দোকানদারের বক্তব্য, “আমি তোমার কাছ থেকে যে ৩০০ টাকা করে কেটেছি, সব মিলিয়ে আমি টাকা ফেরত দিচ্ছি। পুরো ১০০০ টাকাও দিয়ে দিচ্ছি।” অর্থাৎ দোকানদার চাইছে, যেন এই বিষয়টি কাউকে না বলা হয়।
স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ
আকলিমা এই প্রতারণার বিরুদ্ধে মুখ খুলে ব্যবসায়ী সমিতি ও মাতলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রদীপ দাসের দারস্থ হন। প্রদীপ দাস জানান, “আমরা অভিযুক্ত দোকানদারকে ডেকেছি। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।”
সচেতনতার অভাবেই প্রতারণা সুযোগ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, অনেকেই ব্যাংকিং অনলাইন লেনদেন সম্পর্কে সচেতন নন। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ। ফলে সাধারণ মানুষের এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে প্রতারকরা প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের উচিত, মহিলাদের ডিজিটাল লেনদেনের বিষয়ে আরো প্রশিক্ষণ করানো, যাতে তারা নিজেরাই নিরাপদে টাকা তোলা এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট যাচাই করতে পারে।