প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: বছর ঘুরতেই বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু তার আগেই রাজ্য জুড়ে যেন দুর্নীতির আখড়া ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষা থেকে শুরু করে নিয়োগ সমস্ত জায়গায় দুর্নীতি যেন তাঁর কালো ছায়া রেখে গেছে। আর এই দুর্নীতির জেরেই শাসকদলের হয় প্রোফাইল নেতারা জেলের ঘানি টানছে। এইমুহুর্তে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে রাজনীতি মহলে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাতারাতি প্রায় ২৬ হাজার চাকরিপ্রার্থীর চাকরি চলে যাওয়ায় বেকারত্বের সংখ্যা বেড়েছে। যার জেরে চারিদিকে বিক্ষোভ ও মিছিল তৈরি হয়েছে। তবে এই দুর্নীতির মাঝে উঠে এক আরেক দুর্নীতির গন্ধ। কেন্দ্রে ১০০ দিনের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠল।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
চার জেলায় ২৪০ লক্ষ টাকার দুর্নীতি
কেন্দ্রের ১০০ দিনের কাজের (MGNREGA) অনিয়মকে ঘিরে এর আগে একাধিক অভিযোগ উঠে এসেছিল। কোনো জায়গায় ঠিকভাবে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয় না তো কোনো জায়গায় আবার ঠিকভাবে এই প্রকল্প মানা হয় না। তবে এবার এই নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করল কেন্দ্র। ১০০ দিনের কাজে অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনকে জরিমানা করল কেন্দ্র। আর সেই ৪ জেলা থেকে ২৪০ লক্ষ টাকা’ (২৪ কোটি টাকা) উদ্ধার করেছে রাজ্য। গতকাল অর্থাৎ বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে রিপোর্ট দিয়ে এ কথা জানাল যাচাই কমিটি। যা শুনে রীতিমত বিধানসভা নির্বাচনের আগের রাজ্য প্রশাসনের মুখ পুড়ল।
কমিটির রিপোর্টে উঠে এল বিস্ফোরক তথ্য
২০২২ সাল থেকে ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগে অনুদান বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র। ফলে ওই প্রকল্পের কাজ রাজ্য জুড়ে বন্ধ রাখা রয়েছে। আর সেই নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। এবং গোটা ঘটনায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা অর্থাৎ CBI এর তদন্তের দাবি করা হয়। এরপর এই মামলায় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এর নির্দেশে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি এক জন নোডাল অফিসারের নেতৃত্বে গঠিত হয় এবং ওই কমিটিতে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। আর সেই কমিটির রিপোর্টে উঠে আসে বিস্ফোরক তথ্য।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
কমিটির রিপোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় দল রাজ্যে এসেছিল। তারা হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, মালদহ এবং দার্জিলিং এই চার জেলায় ‘৫০০ লক্ষেরও’ বেশি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় দল জানিয়েছিল, প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বঞ্চিত করে ওই টাকা অন্য ব্যক্তিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গিয়েছে। এইভাবে এই ৪ জেলায় দেদার দুর্নীতি শুরু হয়েছে। শেষে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলায় সিবিআইয়ের তদন্তের আবেদনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছে।
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একাধিক প্রশ্ন হাইকোর্টের
তবে এদিন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের তরফ থেকে কেন্দ্রের উদ্দেশে একাধিক প্রশ্ন তুলে ধরা হয়েছে। আদালতের তরফে বলা হয়েছে হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, মালদহ এবং দার্জিলিং এই চার জেলা বাদে রাজ্যের অন্যত্র ১০০ দিনের কাজ শুরু করা যাবে কি না। এমনকি বাকি জায়গায় কাজ শুরু হলে কেন্দ্র কি ফান্ড দেওয়া শুরু করবে কি না? পাশাপাশি উদ্ধার করা টাকা প্রকৃত সুবিধাভোগীদের দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছে হাই কোর্ট। এমনকি রাজ্যের উদ্দেশেও প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে যে পরবর্তী শুনানির দিন জানাতে হবে কেন জব কার্ড হোল্ডারদের বেকার ভাতা দেওয়া হবে না?