সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: ভারতের বাজারে ডিজেলের (Diesel) চাহিদা মুখ থুবড়ে পড়ছে। রাস্তায় পা দিলে এখনও সবথেকে বেশি ডিজেলচালিত যানই চোখে পড়ে। ট্রাক-লরি থেকে শুরু করে ট্রাক্টর-বাস, সবকিছুর ভিটামিনই ডিজেল। কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে চমক দেওয়া তথ্য। চলতি অর্থবছরে নাকি ডিজেলের চাহিহা ৪% এর উপরে উঠছে না। আর এটি গত ১ দশকের মধ্যে সবথেকে ধীরগতির বৃদ্ধি। এবার স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে, এই হ্রাসের মূল কারণ কী? এর প্রভাব ঠিক অর্থনীতিতে কতটা পড়বে?
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
পরিসংখ্যানে ডিজেলের পতন
PPAC-র সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, 2024-25 অর্থবর্ষে ভারতে ডিজেল বিক্রি হয়েছে মাত্র ৯.১৪ কোটি টন। অতীত ঘাটলে দেখতে পাব, বিগত বছরের তুলনায় সামান্য ২ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। তার আগে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে এই বৃদ্ধি ছিল ১২.১ শতাংশ। আর ঠিক তার পরের বছর তা নেমে ৪.৩ শতাংশে ঠেকেছে। আর এবার সেই হার আরও কমে ৪ শতাংশের নীচে নেমে তলানিতে ঠেকেছে। সব থেকে বড় ব্যাপার, দেশের মোট যানবাহনের ৪০ শতাংশই দখল করে রেখেছে ডিজেল। তবুও এর বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী।
কোথায় কমছে, কোথায় বাড়ছে?
সরকারের এক রিপোর্টে প্রধান দুই ডিজেল ব্যবহার ক্ষেত্রে মন্দা দেখা যাচ্ছে। প্রথমত, পণ্য পরিবহন অর্থাৎ ট্রাক-লরির ক্ষেত্রে এবং দ্বিতীয়ত, কৃষি সরঞ্জাম যেমন ট্রাক্টর, পাইপলাইন, পাম্প, ইত্যাদি ক্ষেত্রে। এদিকে হিসাব বলছে, পেট্রোলের চাহিদা 7.5 শতাংশ বেড়েছে, এলপিজির চাহিদা ৫.৬ শতাংশ বেড়েছে। এমনকি বিমানের জ্বালানি বিক্রি ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯০ লক্ষ টনে পৌঁছেছে।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
ইলেকট্রিক যানবাহনের রেকর্ড বৃদ্ধি
বেশ কিছু বিশ্লেষক মনে করছে, মাত্র তিন-চতুর্থাংশ যাত্রী ও পণ্য পরিবহন এখন ডিজেলের উপর নির্ভর করলেও সেই শেয়ার এবার বদলাতে শুরু করেছে। এখন বৈদ্যুতিক যানবাহন, সিএনজি এলপিজি, বাস, ই-রিকশা ইত্যাদির চাহিদা দিনকে দিন আকাশছোঁয়া হচ্ছে।
এমনকি ভারতীয় রেলও দ্রুত ডিজেল ইঞ্জিনগুলি বদলে বৈদ্যুতিক মডেলে পরিণত করছে। দিল্লি, ব্যাঙ্গালুরু, নয়ডা, গুরগাঁও এর মতো শহরে চলছে ই-বাস। পাশাপাশি অ্যামাজন, ফ্লিপকার্টের ডেলিভারি বয়রা ই-রিক্সা দিয়ে কাজ চালাচ্ছে। শুধু তাই নয়, দিল্লিতে ১০ বছরের পুরনো ডিজেলের গাড়িগুলিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ফলে পেট্রোলের চাহিদা দিনের পর দিন বাড়ছে।
ভবিষ্যতে কী হতে পারে?
সূত্রের খবর, চলতি অর্থবর্ষে মোট জালানির চাহিদা 5.7% বৃদ্ধি পেয়ে ২৫.৩০ কোটি টন হতে পারে। আর এর মধ্যে ডিজেল বাড়বে মাত্র ৩ শতাংশ এবং পেট্রোল ৬.৫%। অর্থাৎ, সামান্য হলেও মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারে ডিজেলের বাজার।
ডিজেলের চাহিদা হ্রাস শুধুমাত্র জ্বালানির বাজারের প্রভাব ফেলছে না, বরং দেশের পরিকাঠামো, শিল্প কলকারখানা, এমনকি গ্রামীন কৃষির ধারণ ক্ষমতাতেও আঘাত হানছে। এখন ভবিষ্যতে ডিজেলের চাহিদা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা সময়ই বলে দেবে।