প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: নিয়ম অনুযায়ী কোনও একটি আর্থিক বছরের বাজেটে যে অর্থ বরাদ্দ হয়, তার চেয়ে যদি বেশি অর্থ খরচ হয় তাহলে অতিরিক্ত সেই বরাদ্দ বিধানসভায় পাশ করাতে হয় সরকারকে। তাই গত সোমবার বিধানসভায় অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য চলতি আর্থিক বছরের প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচের হিসাব (WB Estimate of Additional Expenditure) পেশ করল। আর তাতেই ধুন্ধুমার পরিস্থিতি বিধানসভায়। বিরোধী দলের তরফে একের পর এক সমালোচনার শিকার হয় রাজ্য সরকার। শাসকদলও পাল্টা জবাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে টার্গেট করল।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
সরকারি খরচ খাতে অত্যাধিক ব্যয়!
এ দিন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এর পেশ করা তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে ২০২৪-২৫ বছরে বাজেটের সংশোধিত হিসেবের থেকে প্রায় ১৯,৪৬৫ কোটি টাকা বেশি খরচ করেছে রাজ্য সরকার। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ এর তুলনায় যা প্রায় ৪,২০০ কোটি টাকা বেশি। যার মধ্যে সামাজিক খাতে খরচ হয়েছে ৮৫৯৩ কোটি এবং রাজ্য সরকারী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প লক্ষ্মীর ভান্ডারের খাতে খরচ হয়েছে ৬৮৮৯ কোটি টাকা। পাশাপাশি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় দু’হাজার কোটি, শিক্ষায় প্রায় ৩,৬০০ কোটি। এছাড়াও জনস্বাস্থ্যে প্রায় ২,৩০০ কোটি, সড়ক ও জলের খাতে প্রায় ১৪০০ কোটি, পুলিশে ৫০০ কোটি টাকা-সহ একাধিক খাতে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে।
গত কয়েক বছরের রেকর্ডেও অতিরিক্ত খরচ
এমনকি ঋণ পরিশোধ খাতেও বেশ কিছু টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। সব মিলিয়ে অতিরিক্ত খরচের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০,৯৩৩ কোটি টাকা। আশা করা হচ্ছে এই খরচ ভবিষ্যৎ এ আরও বাড়বে। তার অন্যতম কারণ হল লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে আরও নতুন প্রায় ৫ লক্ষ উপভোক্তার সংখ্যা জুড়তে চলেছে। এদিকে আগের সরকারী খাতে খরচের রেকর্ড দেখলে দেখা যাবে সেখানেই বাজেটের থেকেও বেড়েছে খরচের পরিমাণ। ২০২০-২১ সালে রাজ্যের বাজেটের চেয়ে অতিরিক্ত খরচ হয়েছিল ৩৩,০৩৭ কোটি টাকা। ২০২১-২২ সালে ২৫ হাজার কোটি, ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে ২১ হাজার কোটি এবং ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে অতিরিক্ত খরচ হয়েছিল ১৫,২৬২ কোটি টাকা।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
আর এই অতিরিক্ত খরচের হিসাব রাজ্য দরকার পেশ করার পরেই বিধানসভায় বিরোধী দল বিজেপির নেতাদের মধ্যে গোলযোগ দেখা গেল। বিজেপির বিধায়ক তথা অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ীর অভিযোগের সুরে জানিয়েছেন যে, “এই অত্যাধিক খরচ একমাত্র অতি জরুরি প্রয়োজনেই হয়। কিন্তু কী এমন জরুরী কাজ গত ১১ মাসে সরকারকে করতে হয়েছে যার জন্য এত বাজেট পোহাতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। আর্থিক পরিস্থিতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরা অত্যন্ত দরকার। সরকার কিসে কম খরচ করেছে, তা বলা হয়নি। কোনও ব্যাখ্যা নেই। এদিকে বাজেট ব্যয়ের অতিরিক্ত ৬.২% খরচ করা হয়েছে।”
কী বললেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী?
পাল্টা জবাব দেন রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “সকলের কাছে সরকারের এই খরচ অপ্রত্যাশিতমনে করা স্বাভাবিক। আসলে এর পিছনে মূল দোষী কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন, জলজীবন মিশন-সহ কেন্দ্রীয় অনুদানভুক্ত প্রকল্পগুলিতে ঠিকমত বরাদ্দ দিচ্ছে না কেন্দ্র। কিন্তু তারা বরাদ্দ না পাঠালেও সেই কাজগুলো তো থামিয়ে দেওয়া যায় না তাই আমরা বরং ১৩ হাজারের বেশি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি করেছি। আমাদের টাকা থেকে জলের সংযোগও দেওয়া হচ্ছে গ্রামের বাড়ি বাড়ি। তাই অতিরিক্ত টাকা চাওয়া হয়েছে।
চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এই প্রসঙ্গে আরও বলেন যে, “আমাদের রাজ্যে মোট ৯৪টি সরকারি প্রকল্প রয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে প্রতি বছর নতুন একটি করে প্রকল্প চালু করা হয়েছে। আমাদের দেখে অন্য রাজ্য সরকার শর্তসাপেক্ষে লক্ষ্মীর ভান্ডার চালু করেছে। যদিও আমাদের প্রকল্পে কোনও শর্ত নেই। আমরা একটা পরিবারে ১০টি মেয়ে থাকলে তাঁদের সবাইকেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দেব। তাই সেক্ষেত্রে রাজ্যের উপর দিয়েই বেশি খরচ যাচ্ছে।”
রাজ্য রাজনীতি, বিনোদন থেকে শুরু করে খেলা সংক্রান্ত নানা ধরনের খবরের লেটেস্ট আপডেট পেতে এখনই ফলো করুন আমাদের India Hood Bangla কে।