ভারতের নির্বাচন পদ্ধতি ঘিরে একাধিক বিতর্কে বহুদিন ধরে চলে আসছে। ভুয়ো ভোটার, অবৈধ ভোটার, মৃত ব্যক্তির নামে ভোট প্রদান এই সমস্ত অভিযোগ বহুদিন ধরে চলছে। বিরোধী দল থেকে শাসক দল, সবাই প্রশ্ন তুলছে নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে।
এই পরিস্থিতিতে ভোটার তালিকাকে আরো স্বচ্ছ এবং নির্ভুল করতে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন বড়সড় পদক্ষেপ গ্রহণ করল। ভোটার কার্ডের সঙ্গে এবার আধার কার্ড লিঙ্ক (Aadhaar Linking) বাধ্যতামূলক করতে উদ্যোগী হয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কেন এই সিদ্ধান্ত?
প্রতিটি নির্বাচনের পর অভিযোগ ওঠে, অনেক মৃত ব্যক্তি ভোট দিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক জীবিত মানুষ ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও একজন ভোটার একাধিক জায়গায় ভোট দিচ্ছেন। এই ধরনের অভিযোগ বহুবার এসেছে। সম্প্রতি তৃণমূল এবং বিজেপি উভয় দলই জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছে।
তৃণমূল দাবি করেছে যে, পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় বিজেপি শাসিত রাজ্যের অনেক মানুষের নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিজেপি পালটা অভিযোগ করেছে, বাংলার ভোটার তালিকায় ১৩ লক্ষের বেশি ডুপ্লিকেট ভোটার রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভোটার তালিকাকে নির্ভুল করতে এবং ভোটার সমস্যা দূর করতে নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কী সিদ্ধান্ত নিল নির্বাচন কমিশন?
ভোটার আইডি কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ড লিঙ্ক এবার বাধ্যতামূলক হবে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বা ভুয়া ভোটার নির্মূল করতেই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। UIDAI এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যৌথভাবে এই পরিকাঠামো ঠিক করছে। ২০২৫ সালের ৩০শে এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় এবং রাজ্য স্তরের রাজনৈতিক দলগুলিকে তাদের অভিযোগ দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ভোটার কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ড লিঙ্কিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটার তালিকা এবার আরো নির্ভুল হবে। পাশাপাশি একই ব্যক্তির একাধিক জায়গায় ভোট দেওয়া আটকানো যাবে এবং অবৈধ তালিকাগুলি নির্বাচন করা সম্ভব হবে।
ভোটার-আধার লিঙ্ক করবেন কীভাবে?
যদি এই নিয়ম সরকার বাধ্যতামূলক করে, তাহলে ভোটাররা খুব সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে তাদের ভোটার কার্ডের সঙ্গে আধার লিঙ্ক করতে পারবে। এর জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করুন-
- প্রথমে NVSP অফিসিয়াল পোর্টালে যান।
- এরপর “Voter ID-Aadhaar Link” লিঙ্কে ক্লিক করুন।
- এবার ভোটার আইডি কার্ড এবং আধার নাম্বার দিন।
- এরপর OTP ভেরিফিকেশন করুন এবং সাবমিট করুন।
অনলাইনে যদি কোন রকম সমস্যা হয়, তাহলে নিকটবর্তী BLO অফিসে গিয়ে আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ডের ফটোকপি দিয়ে লিঙ্ক করতে পারবেন।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করলে ভোটার তালিকায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এছাড়া ভোটের সময় ভুয়ো ভোটার ইস্যু অনেক অংশেই কমে যাবে। তবে বিরোধীদের আপত্তি থাকায় এই নিয়ম কার্যকর হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। এই পদক্ষেপ ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনবে। এখন দেখার বিষয় নির্বাচন কমিশন কীভাবে এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করে।