প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: সময়টা ছিল ২০২৪, ২২ এপ্রিল। বঙ্গের লোকসভা নির্বাচনের আবহে কলকাতা হাইকোর্ট এসএসসি নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির জেরে ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল করে দিয়েছিল। তবে এই রায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার চ্যালেঞ্জ করলেও দীর্ঘ শুনানির পর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চের রায়ই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। বিচারপতির কলমের খোঁচায় এক লহমায় চাকরি গেল প্রায় ২৬ হাজার চাকরি প্রার্থীর। আর এই আবহে আরও একটি চাকরি বাতিলের প্রশ্ন উঠছে। প্রাথমিকে ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের (Primary Recruitment Case) নির্দেশকে ঘিরে জোর জল্পনা বাড়ছে কলকাতা হাইকোর্টে।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি
সদ্যই সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হওয়ায় শিক্ষা ব্যবস্থা সামান্য টলে গিয়েছে। স্কুলে স্কুলে শিক্ষকের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। আর এই পরিস্থিতিতে প্রাথমিকের চাকরি বাতিল সংক্রান্ত মামলাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সূত্রের খবর, প্রাথমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে এক মামলাজারি হাইকোর্টে অভিযোগ তুলেছিল যে, আদালতের নির্দেশে নম্বর বিভাজন-সহ তালিকা প্রকাশের পর দেখা গিয়েছে, সেই তালিকায় তাঁদের থেকে কম নম্বর পেয়েও অনেক প্রার্থী চাকরির সুপারিশপত্র পেয়েছেন। যা অনৈতিক। তাই সেই প্রসঙ্গে মামলা উঠতেই ২০২৩ সালের মে মাসে কলকাতা হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একধাক্কায় প্রায় ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
অনিশ্চিত ৩২ হাজার চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ!
যদিও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এর সেই রায় মেনে নেয়নি রাজ্য। এরপর সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেছিল রাজ্য সরকার। এই সংক্রান্ত আরও একটি মামলায় বিচারপতি অমৃতা সিংহ ৪২ হাজার নিয়োগের প্যানেল প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর সেই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে স্থগিতাদেশ পেয়েছে। গতকাল অর্থাৎ সোমবার, এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল বিচারপতি সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাস দে’র ডিভিশন বেঞ্চে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এই মামলা থেকে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়ালেন বিচারপতি সৌমেন সেন। এরপর মামলাটি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হলে তিনি এই মামলাটি বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বেঞ্চে পাঠান। সেখানেই এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। আপাতত ঝুলে রয়েছে ৩২ হাজার চাকরিপ্রার্থীর মামলা। তবে এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন এখনো জানা যায়নি।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
এর আগে যখন হাইকোর্টের বিচারপতি পদে ছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তখন বিচারপতি সৌমেন সেনের সঙ্গে তাঁর সংঘাত প্রকাশ্যে এসেছিল। একাধিক অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছিল বিচারপতি সেনের বিরুদ্ধে। রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত একটি মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সে দিনই বিচারপতি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ ওই নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছিল। এবং সিবিআইয়ের দায়ের করা এফআইআর খারিজ করে দেয়। শেষে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সরাসরি বিচারপতি সেনকে রাজনৈতিক মদতপুষ্ট বলে উল্লেখ করেছিলেন। এমনকি ডিভিশন বেঞ্চের এই নির্দেশের প্রক্রিয়াগত ‘ত্রুটি’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।