সৌভিক মুখার্জী, কলকাতাঃ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র মলদ্বীপ এবার ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে। হ্যাঁ একদম ঠিকই শুনেছেন। যেখানে দেশটির পরিচিতি ছিল স্বপ্নের সমুদ্র সৈকত, বিলাসবহুল রিসোর্ট, পর্যটন শিল্পের জন্য, এখন সেই দেশটির গোটা অর্থনীতি দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কায় কাপছে। IMF সম্প্রতি কঠোরভাবে সতর্ক করেছে যে, আগামী দিনগুলিতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, মলদ্বীপের এই সংকটের পিছনে রয়েছে বহিরাগত ঋণের বোঝা, বিশেষত চীনের কাছ থেকে নেওয়া বিপুল পরিমাণ ঋণ এবং দুর্বল বৈদেশিক মুদ্রার প্রভাব দেশটিকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
চিনের ঋণের ফাঁদে মালদ্বীপ | Maldives in debt trap in China |
২০২৩ সালে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পর মলদ্বীপ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরো সঙ্ঘবদ্ধ করেছিল। যদিও একদিকে এই সম্পর্ক পরিকাঠামো উন্নয়নের সুযোগ দিয়েছে, অন্যদিকে দেশটি চীনের কাছ থেকে নাকি বিপুল পরিমাণে ঋণ নিয়েছে, যা এখন মালদ্বীপের অর্থনৈতিক সংকটের প্রধান কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সব থেকে বড় সমস্যা হল, মলদ্বীপের হাতে এখন পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা নেই যা দিয়ে এই ঋণ পরিশোধ করা যাবে। শুধু তাই নয়, কোভিড-১৯ এর পর দেশটির পর্যটন খাতও এখনও পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি, যা এখন আরও সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছে।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
IMF কী বলছে?
IMF-এর একটি প্রতিনিধি দল ৩রা ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মালদ্বীপে ছিল। তারা মালদ্বীপের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ভবিষ্যৎ এবং সরকারের নীতি সম্পূর্ণভাবে পর্যালোচনা করেছে। IMF মলদ্বীপকে সতর্কবার্তা জারি করেছে যে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুবই অনিশ্চিত এবং সামনের দিনগুলি মলদ্বীপের জন্য আরো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এখানেই শেষ নয়। ২০২৫ সালে মলদ্বীপের জিডিপি বৃদ্ধির হার নাকি ৫% হবে বলে আশা করছে তারা।
রাজস্ব ঘাটতি ও ঋণের বোঝা বাড়ছে
মলদ্বীপের বাজেট ঘাটতি এবং বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা দিন দিন বেড়ে চলেছে, যা অর্থনীতিকে আরো সংকটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। IMF-এর কথায় ২০২৫ সালের বাজেটে ব্যয় সংকোচনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সব থেকে জরুরী, যা অর্থনৈতিক ভারসাম্য হয়তো পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করবে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে কী করছে মলদ্বীপ সরকার?
IMF-এর মিশন চলাকালীন তারা মলদ্বীপের অর্থমন্ত্রী মূসা জামির, মলদ্বীপ মনিটারি অথরিটি (MMA)-এর গভর্নর আহমেদ মুনাওয়ার এবং সংসদ সদস্যদের সঙ্গে একটি বৈঠক সেরেছিল। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু ব্যয় সংকোচনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, বর্তমান মলদ্বীপের জন্য এটি যথেষ্ট নাও হতে পারে। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে মলদ্বীপের জন্য আরো খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে।
দক্ষিণ এশিয়ার এই ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রটি বর্তমানে অর্থনৈতিক ধ্বংসের একদম দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। অতিরিক্ত ঋণের বোঝা, দুর্বল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বাজেট ঘাটতি এবং পর্যটন খাতে ধাক্কার কারণে দেশটি ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি। এখন দেখার মলদ্বীপ এই ভয়াবহ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে নাকি শ্রীলঙ্কার মত দেউলিয়া হয়ে পড়বে।