সৌভিক মুখার্জী, কলকাতাঃ সম্প্রতি ব্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরে কন্নড় অভিনেত্রী রণ্যারাওকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ ছিল তিনি নাকি দুবাই থেকে ১৪.২ কেজি সোনা পাচার করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বর্তমানে তাকে আটক করে রাখা হয়েছে। জানা গেছে তিনি তার পোশাকের মধ্যে নাকি সোনা লুকিয়ে এনেছিলেন এবং শরীরের কিছু অংশেও সোনার গয়না পড়েছিলেন, যাতে কাস্টমস অফিসারদের চোখ এড়িয়ে যাওয়া যায়। তবে মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে চারবার দুবাই ভ্রমণ তার ওপর সন্দেহজনক আশঙ্খা তৈরি করে এবং শেষমেষ তিনি ধরা পড়েন।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
এই ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, দুবাই থেকে ভারতে সোনা আনা কি সত্যিই লাভজনক? কেন মানুষ দুবাই থেকে ভারতে সোনা আনতে এত আগ্রহী? চলুন সেই রহস্যের বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিই আজকের প্রতিবেদনে।
দুবাই সোনার দাম কী সত্যিই কম? | Gold Price In Dubai |
সাধারণ মানুষের মনে এখন একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে, যে দুবাইয়ে সোনার দাম কি সত্যিই কম? হ্যাঁ, দুবাইয়ে সোনার দাম ভারতের তুলনায় অনেকটাই সস্তা। আর সেটাই পাচারের অন্যতম প্রধান কারণ। দুবাই দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের অন্যতম সোনার বাজার হিসেবে পরিচিত। এখানে ভারতীয়দের সোনা কেনাকাটার অন্যতম কারণ হলো, ভারতের তুলনায় অনেক স্বল্প মূল্যে এখানে সোনা মেলে।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
দুবাইয়ে হলুদ ধাতুর দাম কম হওয়ার পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত দুবাইয়ে সোনার উপর কোনরকম কর আরোপ করা হয় না। তাই বাজার দরের চেয়ে বেশি দাম দিতে হয় না। ভারতে যেখানে সোনা আমদানির উপর বড় অঙ্কের শুল্ক দিতে হয়, দুবাইয়ে তার কোন ঝামেলাই নেই। এছাড়া দুবাইয়ের সোনার বাজার অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। ফলে ডিলাররা কম লাভে বেশি বিক্রি করতে চায়।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০২৪ সালের ২৫ই সেপ্টেম্বর দুবাইতে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ছিল প্রতি গ্রাম ৩১৩.৬৬ দিরহাম, যা ভারতীয় মুদ্রায় দাড়ায় আনুমানিক ৭১৩৮.৯৬/- টাকা প্রতি গ্রাম। অথচ ভারতে একই দিনে সোনার দাম ছিল ৮২২৫/- টাকা প্রতি গ্রাম। এই বিশাল পার্থক্যই বুঝিয়ে দিচ্ছে, কেন দুবাই থেকে সোনা আনতে মানুষ এত বেশি আগ্রহী।
ভারতের সোনার আমদানিতে বিধিনিষেধ
ভারত সরকার সোনার আমদানির উপর বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যাতে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা যায় এবং সোনা পাচার বন্ধ করা যায়। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ভারত সরকার সোনার আমদানি শুল্ক ১৫% থেকে কমিয়ে ৬% করেছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল পাচার কমিয়ে বৈধ আমদানিকে উৎসাহিত করে তোলা এবং বাজারে সোনার দাম নিয়ন্ত্রণ করা।
বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, যদি কোন পুরুষ যাত্রী বিদেশ থেকে সোনা আনে, তাহলে সর্বোচ্চ ২০ গ্রাম সোনা আনতে পারবে, যার মূল্য ৫০,০০০/- টাকা পর্যন্ত হতে হবে। কিন্তু মহিলা যাত্রীর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪০ গ্রাম সোনা আনা যাবে, যার মূল্য ১ লক্ষ টাকার মধ্যে হতে হবে। এক্ষেত্রে বলে রাখি, এর থেকে বেশি পরিমাণে সোনা আনলে অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হবে, যার হার আমদানি করা সোনার পরিমাণের উপর নির্ভর করবে।
সোনা আমদানির ধাক্কা ভারতীয় অর্থনীতিতে
আমদানি শুল্ক কমানোর পরে ভারতে সোনার দাম রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজার মূল্য লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাবো, দিনের পর দিন সোনার দাম বেড়েই চলেছে। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ভারতে ১০.০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সোনার আমদানি করা হয়েছে যা উৎসবের মুরসুমের আগে ব্যাপক চাহিদার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই ব্যাপক পরিমাণে আমদানির ফলে ভারতের বাণিজ্যে ঘাটতি বেড়ে গেছে। গত আগস্ট ২০২৪-এ ভারতের বাণিজ্যে ঘাটতি পৌঁছেছে ২৯.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
দুবাই থেকে অনেকেই সহজ পথে অবৈধভাবে বেশি পরিমাণে সোনা আনার চেষ্টা করেন, যার ফলে শেষমেশ ধরা পড়তে হয়। অভিনেত্রী রণ্যারাও-এর ঘটনার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে, বৈধ পদ্ধতিতে সোনা আমদানি করাই একমাত্র নিরাপদ এবং সঠিক উপায়। তাই ভারতীয়দের এখন থেকেই সচেতন হওয়া উচিত।