সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: সোনার ঝলক দিনের পর দিন আরো উজ্জ্বল হচ্ছে। শেয়ার বাজারের অস্থিরতার মধ্যেও বিনিয়োগকারীদের সোনা দুর্দান্ত রিটার্ন এনে দিচ্ছে। জানলে চমকে উঠবেন, গত এক বছরে সোনার দাম (Gold Price) ৪০% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তবে সোনার পাশাপাশি রুপোর দরও ৩৪% বেড়েছে, যা অনেকের নজর এড়িয়ে গিয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
সোনা-রুপোর বর্তমান দাম কী বলছে?
বর্তমানে সোনার আন্তর্জাতিক মূল্য প্রতি আউন্স ৩৩০ মার্কিন ডলার যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯০ হাজারের গুন্ডি পার করেছে প্রতি ১০ গ্রামে। অন্যদিকে রুপোর আন্তর্জাতিক মূল্য ৩৩ মার্কিন ডলার প্রতি আউন্স। হ্যাঁ একদম ঠিকই শুনেছেন, যা ভারতীয় মুদ্রায় দাঁড়াচ্ছে প্রতি কেজি ১ লক্ষ টাকার বেশি। এই বিশাল মূল্যবৃদ্ধির পর সবথেকে বড় প্রশ্ন হল, সোনার দাম কি আরো বাড়বে? রুপোর দামের ভবিষ্যৎ কী? আগামী ৫, ১০ বা ১৫ বছরে কোনটি হবে সেরা বিনিয়োগের বিকল্প?
রুপোর এত দাম বাড়ার কারণ কী?
বিশ্ববাজারে পরপর ৫ বছর রুপোর চাহিদা আকাশছোঁয়া। ২০২৫ সালে বৈশ্বিক রুপোর চাহিদা ১.২০ বিলিয়ন আউন্স থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সরবরাহ বাড়লেও তা প্রায় ১.০৫ বিলিয়নে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। রুপোর বাজার মূলত দুটি কারণে উর্ধ্বগতি হচ্ছে। প্রথমত, শিল্পক্ষেত্রে রুপোর ব্যাপক চাহিদা দেখা যাচ্ছে। কারণ গ্রিন টেকনোলজি, সৌরশক্তি এবং ইলেকট্রনিক্স শিল্পে দিনের পর দিন রুপোর ব্যাবহার বাড়ছে। দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রুপোর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে, যা সরাসরি এর দামের উপর প্রভাব ফেলছে। এই হিসাবে ভবিষ্যতে রুপোর দাম আরো বাড়তে পারে।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
গোল্ড-সিলভার রেশিও
গোল্ড-সিলভার রেশিও বলতে আমরা বুঝি, ১ আউন্স সোনার সমান মুল্য পেতে কত আউন্স রুপো প্রয়োজন, তার অনুপাত। বর্তমানে এই রেশিও দাঁড়িয়েছে ৯১:১। অর্থাৎ, প্রতি ১ আউন্স সোনার সমান মূল্যের জন্য ৯১ আউন্স রুপো দরকার। তবে দীর্ঘমেয়াদী এই রেশিওর গড় হার ৭০:১। অর্থাৎ, যদি এই রেশিও কমতে শুরু করে তাহলে রুপোর দাম আরো বাড়বে, কিংবা সোনার দাম কম হলে রেশিও স্বাভাবিক হবে।
সোনার কি ভবিষ্যতে দাম আরো বাড়বে?
সোনার দামের এই চরম ঊর্ধ্বগতির পিছনে কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, মুদ্রাস্ফীতির লগ্নে বিনিয়োগকারীরা সেফ জায়গা হিসেবে সোনাকে বেছে নিচ্ছে। ফলে সোনার দাম স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি বিগত বছরগুলিতে প্রচুর পরিমাণে সোনা কিনেছে, বলতে গেলে ১০০০ টনের বেশি সোনা কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি, যা সোনার বাজারে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। তৃতীয়ত, মার্কিন মুদ্রানীতি এবং বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিনিয়োগকারীরা সোনার প্রতি বেশি ঝুঁকছে। এছাড়া মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। ফলে ডলারের দাম আরো কমবে এবং সোনার দাম আরো বাড়তে পারে।
আগামী দিনে বিনিয়োগের বিকল্প হিসেবে কোনটিকে বেছে নেবেন?
যদি ৫ বছর অর্থাৎ, স্বল্পমেয়াদে বিনিয়োগ করতে চান তাহলে উচ্চ মুনাফার জন্য হতে পারে রুপো সেরা বিকল্প। কারণ শিল্পক্ষেত্রে রুপোর চাহিদা দিনের পর দিন বাড়ছে। যদি মধ্যমেয়াদি অর্থাৎ ১০ বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে সোনার দাম বেশি থাকলেও রুপো লাভজনক হতে পারে। গোল্ড-সিলভারের রেশিও কমতে থাকলে রুপোতে বিনিয়োগ করা সবথেকে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কিন্তু যদি দীর্ঘমেয়াদি অর্থাৎ, ১৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে চান তাহলে সোনা অর্থনৈতিক মন্দার হাত থেকে সুরক্ষা দেবে। রুপোর মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে সব থেকে নিরাপদ বিকল্প।
তাই একটি সুষম পোর্টফোলিও হিসেবে বোঝা যায় যে, সোনা ও রুপোর সংযোজন দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভজনক হতে পারে। তবে বিনিয়োগ করার আগে অবশ্যই বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেই বিনিয়োগ করুন। India Hood কাউকে বিনিয়োগ করার জন্য বাধ্য করে না। তাই আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হলে India Hood কোনরকম দায়বদ্ধতা নেবে না। তবে বাজারের হালচাল এবং প্রতিনিয়ত টিপস পেতে হলে অবশ্যই ফলো করুন India Hood Bangla কে।