সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: সোনা শুধুমাত্র একটি ধাতু নয়। বরং এটি সঞ্চয়, বিনিয়োগ, গয়না সবকিছুর এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সোনার দাম (Gold Price) যেন আকাশছোঁয়া। যা বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভজনক হলেও সাধারণ ক্রেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। তবে এবার নাকি বড়সড় পরিবর্তন আসতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
বেশ কিছু বাজার বিশেষজ্ঞ মনে করছে, আগামী কয়েক বছরে নাকি ৩৮% পর্যন্ত দাম কমতে পারে হলুদ ধাতুর। অর্থাৎ, যদি বর্তমানে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ১০ গ্রাম ৯০ হাজার টাকার কাছাকাছি হয়, তাহলে তা কমে দাঁড়াতে পারে মাত্র ৫৫ হাজার টাকার কাছাকাছি। কিন্তু আসলেই কি এমন হবে? চলুন একটি খতিয়ে দেখি।
কেন বাড়ছে সোনার দাম?
বর্তমান সময়ে মূলত সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছানোর পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য সোনার বাজার গরম হচ্ছে। দ্বিতীয়ত মুদ্রাস্ফীতি বাড়লে সাধারণ মানুষ সোনাকে বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে বাছেন। তাই সোনার দাম তখন বৃদ্ধি পায়।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
এছাড়া মার্কিন অর্থনীতির মন্দা এবং ডলারের মূল্য ওঠানামার কারণে বিনিয়োগকারীরা সোনার দিকে ঝুঁকছেন। আর এই কারণগুলির ফলে সোনার দাম এখন প্রতি আউন্সে ৩০৮০ মার্কিন ডলারে পৌঁছে গিয়েছে, যা অতীতের রেকর্ডকেও ভেঙ্গে ফেলেছে।
তাহলে কেন দাম কমবে?
বেশ কিছু বাজার বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা বলছে, সোনার দামে ধস নামার পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। সেগুলি হল-
সোনার সরবরাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে
সোনার দাম বাড়লে উৎপাদন স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সোনার উৎপাদন ৯% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বাজারে সরবরাহ আরো বাড়িয়ে দেবে। অস্ট্রেলিয়া, চীন, রাশিয়ার মতো দেশগুলোতে সোনার খনির উৎপাদন বাড়ছে। ফলে ভবিষ্যতে মূল্য পতনের একটা আশঙ্খা থেকে যাচ্ছে।
চাহিদার পরিবর্তন
২০২৪ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি ১০৪০ টন সোনা কিনেছে। তবে ওয়ার্ল্ড কাউন্সিলের রিপোর্ট বলছে, ৭১% ব্যাংক ভবিষ্যতে সোনার হোল্ডিং কমাতে পারে। তাই ভবিষ্যতে বিনিয়োগকারীরা বিকল্প সম্পদের দিকে ঝুঁকবেন। বিশেষ করে স্টক মার্কেট, ক্রিপ্টোকারেন্সি ইত্যাদি।
সোনার বাজারের অবস্থান
বেশ কিছু বাজার বিশেষজ্ঞ মনে করছে, সোনার বাজার এখন Bubble অবস্থায় রয়েছে, যেখানে দ্রুত ধস নামতে পারে। ২০২৪ সালে সোনার ফান্ড বিনিয়োগ দ্রুত বেড়েছে, যা সাধারণত পতনের আগে দেখা যায়। তবে ইতিহাস বলছে, যখন কোন পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে, তার কয়েকদিন পরেই মূল্যে ধস নামে।
বিনিয়োগকারীদের কী করা উচিত?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, সোনার দাম ৩৮% পর্যন্ত ধাক্কা খেতে পারে। অর্থাৎ, প্রতি আউন্স সোনা ১৮২০ মার্কিন ডলারে নেমে আসতে পারে। তবে আরেক নামিদামি সংস্থা বলছে, সোনার দাম আরো বাড়তে পারে এবং আগামী ২ বছরে প্রতি আউন্স ৩৫০০ মার্কিন ডলারে ছুঁতে পারে।
তবে যারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারী, তাদের ধৈর্য ধরে বসে থাকাই ভালো। কিন্তু যদি স্বল্পমেয়াদে বিনিয়োগ করে থাকেন, তাহলে বাজায় বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিন। পাশাপাশি সোনার দাম কমলে কেনার জন্য প্রস্তুত থাকুন। কারণ ভবিষ্যতে মূল্য বৃদ্ধি হতেও পারে, আবার পতনও হতে পারে।