সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: মোদি সরকারের রাজত্ব শুরুর সময় একটি স্লোগান সোশ্যাল মিডিয়া কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছিল। আর তা হলো “না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা।” অর্থাৎ, তিনি নিজে দুর্নীতিতে জড়াবেও না এবং কাউকে দুর্নীতির সুযোগও দেবে না।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
কিন্তু সময় বদলেছে এবং পরিস্থিতিও বদলেছে। আদৌ তার দাবি কি বাস্তবে রূপ নিয়েছে? এবার সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএমএফ। তাদের রিপোর্টে (IMF Report) উঠে এসেছে চমক দেওয়া তথ্য। জানা যাচ্ছে ভারত আর্থিক স্বচ্ছতার কাতারে ৪০ ধাপ নীচে নেমে এসেছে। কিন্তু কেন? জানতে হলে প্রতিবেদনটি পড়ুন।
রিপোর্ট কী বলছে?
আইএমএফ এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের ১৫৫টি দেশের মধ্যে ভারত আর্থিক স্বচ্ছতার খাতায় ৫৪ তম স্থানে ঠাঁই পেয়েছে। অর্থাৎ, ২০১২ সালে ইউপিএ সরকারের সময় ভারতের অবস্থান যেখানে ছিল ১৪ নম্বরে, আর এখন তা একধাক্কায় ৪০ ধাপ পিছিয়ে ৫৪ নম্বরে ঠেকেছে। সুত্রের খবর, শুধু সাধারণ মানুষের কার্যকলাপ নয়, বরং সরকারের অন্দরের আর্থিক আদান-প্রদানের স্বচ্ছতার অভাবের কারণে এই তলানিতে ঠেকা।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
আসল গলদ কোথায়?
আসলে এই রিপোর্টের তৈরি করেছে ভারতের অর্থমন্ত্রকের এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি। সূত্রের খবর, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দপ্তর এবং রাজ্যগুলির মধ্যে কর এবং রাজস্ব বন্টনের ক্ষেত্রে যে কৌশল নেওয়া হয়েছে, তাতে যথেষ্ট স্বচ্ছতার ঘাটতি দেখা গিয়েছে। আর এই কারণেই দিনের পর দিন তলানিতে ঠেকছে ভারত।
অর্থ কমিশনের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
প্রতি পাঁচ বছরে একবার করে অর্থ কমিশন গঠন করা হয়, যার দায়িত্ব থাকে রাজ্যগুলির মধ্যে কর বৈষম্য ঠিক করে দেওয়া। বর্তমানে ১৬ তম অর্থ কমিশন কাজ করছে। আর তারা এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পরামর্শ দিয়েছে, যাতে একটি স্বচ্ছ পোর্টাল তৈরি করা হয় এবং সমস্ত লেনদেনের তথ্য প্রকাশ্যে থাকে। তবে আদৌ তা বাস্তবে রূপ নেবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে।
চলছে গোপন ঋণ এবং আর্থিক ধোঁয়াশা
রিপোর্টে আরও একটি গুরুতর তথ্য সামনে এসেছে। জানা যাচ্ছে, ভারত সরকারের কিছু গোপন ঋণ রয়েছে, যেগুলি জনগণের সামনে এখনো আনা হয়নি। আর এই ধরনের ঋণ দেশের আর্থিক পরিস্থিতিকে দুর্বল করে তুলছে দিনের পর দিন।
২০২১ সালে অবস্থা ছিল আরও খারাপ
তবে সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ২০২১ সালে ভারতের অবস্থান ছিল ৭৮ নম্বরে। ভাবতে পারছেন? যদিও সেই খরা কাটিয়ে কিছুটা উন্নতি করে ২০২৫ সালে ৫৪ তম স্থানে ঠেকেছে। তবে ২০১২ সালের সেই ১৪তম স্থান থেকে তা কয়েকগুন দূরে।
যে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ভিত তৈরি করেছিল, সেই সরকারই এখন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টে প্রশ্নের কাঠগোড়ায় দাঁড়িয়ে। আর্থিক স্বচ্ছতার এই প্রশ্ন আবারও প্রমাণ করল যে, দাবি আর বাস্তবের মধ্যে ফারাক অনেকটাই। এখন ভারতের আর্থিক স্বচ্ছতার ভবিষ্যৎ কোন দিকে গড়ায় সেটাই দেখার।