বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: শুক্রবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চতুর্থ টি টোয়েন্টি ম্যাচে (India Vs England) সকলকে চমকে দিয়ে মাঠে নেমেই ইংলিশদের 3 উইকেটে দখল জমিয়েছিলেন ভারতের তরুণ পেসার হর্ষিত রানা। তবে এই ঘটনার পরই শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সমালোচকদের একটা বড় অংশের দাবি, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের নিয়মের তোয়াক্কা না করে অলরাউন্ডার শিবম দুবের পরিবর্তে একজন সম্পূর্ণ পেসারকে নামিয়েছে ভারত।
এই ঘটনা সত্যিই মেনে নেওয়ার মতো নয়। তবে জোরালো বিতর্কের মাঝেও দুবের বিকল্প হিসেবে মাঠে নেমে ইংল্যান্ডের রাতের ঘুম কেড়েছিলেন KKR তারকা। নেপথ্যে ICC-র কনকাশন সাব নিয়ম। ঠিক কেমন এই নিয়ম? IPL-এর ইম্প্যাক্ট প্লেয়ারের সাথে কি কোনও মিল রয়েছে? জানুন বিস্তারিত।
হর্ষিত রানার মাঠে নামা নিয়ে ক্ষুব্ধ ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়করা
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে গতকালের চতুর্থ টি টোয়েন্টিতে মাঠে নেমেছিলেন ভারতের পার্ট টাইম পেসার হর্ষিত রানা। সম্ভাবনার আড়ালে থেকে বাটলারদের বিরুদ্ধে তাঁর মাঠে নামার ঘটনা অবাক করেছে ভারতীয় সমর্থকদের। তবে অবাক হলেও শুক্রবারের ম্যাচে তাঁর হিরো হয়ে ওঠা ভক্ত মহলে খুশির জোয়ার এনেছে। কিন্তু ভারতের এই সাফল্যে একেবারেই খুশি নয় ইংল্যান্ড।
ICC-র কনকাশন সাব ব্যবহার করে ভারতের এই পরিবর্তনে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ভন। প্রাক্তন ইংলিশ ক্রিকেটারের মতে, একজন পুরোপুরি বোলারকে কীভাবে অলরাউন্ডারের পরিবর্তে নামাল ভারত! হর্ষিত রানা একজন পার্ট টাইম পেসার, তাকে এভাবে নামানো টা কি ঠিক হয়েছে!
ভনের পাশাপাশি ভারতের এই কীর্তি অবাক করেছে ইংল্যান্ডের আরেক প্রাক্তন অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুককে। রানার মাঠে নানা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, আমি সত্যিই বুঝতে পারলাম না কীভাবে অলরাউন্ডার শিবম দুবের পরিবর্তে কনকাশন সাব হিসেবে রানাকে মাঠে নামানো হলো?
ICC-র কনকাশন সাব নিয়ম ঠিক কেমন? ICC Concussion Sub Rules
ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের পুরুষদের টি-টোয়েন্টির ক্ষেত্রে প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী, 1.2.7 ধারার আওতায় কনকাশন সাব বিষয়টি রয়েছে। ICC-র এই ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, মাঠে যে খেলোয়াড়ের বদলি খুঁজছে দল সেই খেলোয়াড়ের কনকাশন সব হিসেবে সমগোত্রীয় অথবা লাইক ফর লাইক প্লেয়ার নামানোর অনুমোদন দেবেন ম্যাচ রেফারি।
পড়তে ভুলবেন না: লাল হলুদ তারকার ভুলেই ড্র শুক্রবারের ম্যাচ, কীভাবে প্লে অফে উঠবে ইস্টবেঙ্গল?
অর্থাৎ একজন ব্যাটসম্যানের পরিবর্তে কনকাশন করা যাবে একজন ব্যাটসম্যানকেই। একইভাবে বোলারের পরিবর্তে মাঠে নামবেন একজন বোলার। সেই সূত্র ধরে অলরাউন্ডারের ক্ষেত্রে কনকাশন সাব হবেন একজন অলরাউন্ডার। তবে ভারতের ক্ষেত্রে গতকাল নিয়মটা খানিকটা ভিন্ন ছিল। এমন প্রশ্নই উঠছে নানা মহলে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার নিয়মে বেশ কিছু বোঝার বিষয় রয়েছে।
1.2.7.4 উপ ধারা বলছে, কনকাশন সাব হিসেবে যে বিকল্প খেলোয়ারকে মাঠে নামানো হচ্ছে তাঁকে লাইক ফর লাইক প্লেয়ার হিসেবে বিবেচনা করার আগে ম্যাচ রেফারি গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। একইভাবে যে ক্রিকেটার মাঠ থেকে উঠে যাচ্ছেন বাকি ম্যাচে তাঁর আর কোনও ভূমিকা থাকবে না।
পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট যে খেলোয়াড় মাঠে নেমেছেন তিনিই দলের দায়িত্বে থাকবেন। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার নিয়মে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে, কনকাশন সাব নামানোর ক্ষেত্রে ম্যাচ রেফারির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। হয়তো সেই সূত্র ধরেই গতকালের ম্যাচে হর্ষিত রানাকে দলে পেয়েছিল ভারত।
মাঠে নেমেই ম্যাচের গতি বাড়ান রানা
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চতুর্থ টি টোয়েন্টিতে জল্পনা কাটিয়ে সুযোগ পেয়েছিলেন অলরাউন্ডার শিবম দুবে। তাঁর অংশীদারিত্ব শুক্রবার ভারতের ঝুলিতে মোটা অঙ্ক যোগ করেছিল। এদিন ইংল্যান্ড বোলারদের পিটিয়ে 34 বলে 53 রান করেন শিবম। তবে ইনিংসের শেষ লগ্নে পৌঁছে জোরালো বাউন্সারের আঘাতে মাথায় চোট পান তিনি। অগত্যা মাঠ ছাড়তে হয় ভারতীয় তারকাকে।
কাজে আসে ICC-র কনকাশন সব নিয়ম। মাঠে নামেন হর্ষিত রানা। শুক্রবার পুনের ময়দানে KKR বোলারের পা পড়তেই একের পর এক উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। এদিন 4 ওভারের কোটায় 33 রান খরচ করে 3 উইকেট তুলেছিলেন রানা। জয় পেয়েছিল টিম ইন্ডিয়া।