সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: ছোট সঞ্চয়ের বড় ভবিষ্যৎ। আর এটিই যদি আপনার মূল লক্ষ্য হয়, তাহলে পোস্ট অফিসের ৫ বছরের রেকারিং ডিপোজিট স্কিম (Post Office RD Scheme) হতে পারে আপনার জন্য সেরা বিকল্প। চাকরি জীবনের শুরু বলুন কিংবা সংসার চালানোর পাশাপাশি সঞ্চয়ের ইচ্ছা, আজকের দিনে সকলেই চায় নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্তভাবে তাদের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে। আর এই সমস্ত দিক থেকে পোস্ট অফিসের আরডি স্কিম একেবারেই নিরাপদ এবং লাভজনক একটি স্কিম। চলুন এই স্কিমের সমস্ত সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
পোস্ট অফিসের আরডি স্কিম কী?
পোস্ট অফিসের পাঁচ বছরের রেকারিং ডিপোজিট (RD) স্কিম হল এমন একটি সরকারি সঞ্চয় প্রকল্প, যেখানে আপনি প্রতি মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা রাখতে পারবেন। তবে এখানে পাঁচ বছর টাকা জমা রাখতে হয়। তারপর মোটা অঙ্কের টাকা রিটার্ন আসে। আর এই স্কিমের উপর সরকারের গ্যারান্টি থাকায় ঝুঁকির কোনোরকম সম্ভাবনা নেই।
সুদের হার এবং টাকা জমার নিয়ম
এই স্কিমের সবথেকে বড় সুবিধা এখানে ৬.৭% বার্ষিক হারে সুদ দেওয়া হয়। প্রতি ত্রৈমাসিক চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের সুবিধাও রয়েছে এখানে। প্রতি মাসে ন্যূনতম ১০০ টাকা জমা করা যায়। তবে জমা করার কোনরকম উর্ধ্বসীমা নেই। আপনি ইচ্ছে মতো টাকা এখনো জমা রাখতে পারবেন। এখানে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি থেকে শুরু করে যৌথ অ্যাকাউন্টধারী, দশ বছর বা তার বেশি বয়সী শিশু, মানসিকভাবে অক্ষম ব্যক্তি সকলেই আবেদন করতে পারে।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
১০ হাজার টাকা মাসিক জমায় কত টাকা পাবেন?
যদি আপনি প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে জমা করতে পারেন, তাহলে পাঁচ বছরে আপনার মোট জমা দাঁড়ায় ৬ লক্ষ টাকা। সেক্ষেত্রে আপনার সুদ দাঁড়াবে ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৬৫৯ টাকা। হ্যাঁ একদম ঠিক শুনেছেন। অর্থাৎ, আপনার ম্যাচুরিটি অ্যামাউন্ট হবে ৭ লক্ষ ১৩ হাজার ৬৫৯ টাকা। মানে আপনি পাঁচ বছরে মাত্র ৬ লক্ষ টাকা জমা রাখলেই সুদ সহ ৭ লক্ষ টাকার বেশি রিটার্ন পাবেন।
জমা দেওয়ার নিয়ম
যদি আপনি মাসের ১ তারিখ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন, তাহলে প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে এখানে কিস্তি জমা দিতে হবে। ১৬ তারিখের পর যদি অ্যাকাউন্ট খোলেন, তাহলে প্রতি মাসের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে জমা দিতে হবে। বলে রাখি, এখানে চেক বা নগদ উভয় মাধ্যমেই অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।
কিস্তি বন্ধ হলে কী হবে?
যদি আপনি প্রতিটি কিস্তিতে ১০০ টাকা না দেন, তাহলে প্রতি মাসে ১ টাকা করে জরিমানা গুনতে হবে। টানা চার মাস যদি কিস্তি বন্ধ করে থাকেন, তাহলে আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে সুবিধাও রয়েছে। বন্ধ হওয়া অ্যাকাউন্ট পুনরায় দুই মাসের মধ্যে চালু করা যায়। চার মাসের কম কিস্তি বাকি থাকলে অ্যাকাউন্ট চালু রেখে বাকি কিস্তি জমা করা যাবে।
অগ্রিম কিস্তি জমার সুবিধা
যদি কেউ ছয় মাস অগ্রিম কিস্তি জমা দিতে পারেন, তাহলে তাকে ১০ টাকা ছাড় দেওয়া হবে। যদি ১২ মাসের অগ্রিম কিস্তি একবারে জমা দিতে পারেন, তাহলে এখানে ৪০ টাকা ছাড় দেওয়া হবে। বলে রাখি, এখানে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় অথবা পরে, যেকোন সময়ই এই সুবিধা নিতে পারেন।
লোনের সুবিধা
এই স্কিমের সবথেকে বড় সুবিধা হল, এখানে বিনিয়োগের বিপরীতে লোন নেওয়া যায়। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। অ্যাকাউন্টে ১২টি কিস্তি জমা থাকলে মোট জমার ৫০% পর্যন্ত লোন নিতে পারবেন। তবে লোন নিতে গেলে আপনাকে ২% বেশি সুদ প্রদান করতে হবে। লোন মাসিক কিস্তিতে বা এককালীন পরিশোধ করতে পারবেন। কিন্তু সময় মত যদি লোন পরিশোধ না করেন, তাহলে ম্যাচিউরিটি অ্যামাউন্ট থেকে লোন এবং সুদ কেটে নেওয়া হবে।
মেয়াদ শেষে কী হবে?
আপনার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হলে ম্যাচুরিটির টাকা হাতে পাবেন। চাইলে আরো পাঁচ বছর এই অ্যাকাউন্টের সময়সীমা বাড়াতে পারবেন। এক্ষেত্রে পুরো বছরের জন্য আরডি সুদ প্রযোজ্য হবে, কিন্তু আংশিক সময়ের জন্য সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদ দেওয়া হবে। তবে অতিরিক্ত পাঁচ বছর যদি টাকা না জমা দিয়ে চালাতে চান, তাহলে সেক্ষেত্রে সেই সুবিধাও থাকছে।
এক্ষেত্রে একটি কথা বলে রাখি, যদি অ্যাকাউন্টধারকের মৃত্যু হয়, তাহলে নমিনি বা উত্তরাধিকারী পোস্ট অফিসে ফর্ম জমা দিয়ে সেই টাকা তুলে নিতে পারবেন। চাইলে ওই অ্যাকাউন্ট আগের মেয়াদ পর্যন্ত চালিয়েও যেতে পারেন।
কেন বেছে নেবেন এই স্কিম?
প্রথমত এই স্কিমে নিরাপদ এবং গ্যারান্টিযুক্ত রিটার্ন মেলে। স্বল্পমেয়াদে নিয়মিত সঞ্চয়ের সুযোগ প্রদান করছে পোস্ট অফিসের এই স্কিম। এছাড়া জরুরী ভিত্তিতে আপনি লোনের সুবিধাও পাবেন। ঝুঁকি এখানে একদমই শূন্য এবং সরকারি প্রকল্প হওয়ায় সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য। তাই যদি আপনি মাসে মাত্র ১০০ টাকা বা তার বেশি জমা রেখে ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে চান, তাহলে আজই পোস্ট অফিসে গিয়ে আরডি স্কিমকে বেঁছে নিন এবং আপনার ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করুন।