সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: সোমবার সকাল হতে না হতেই এক ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেল ভারতের শেয়ার বাজারে (Share Market)। BSE Sensex ও Nifty 50 দুই সূচকেই যেন একযোগে রক্তপাত ঘটলো। দিনের শুরুতেই দেখা গেল 4% এর বেশি শেয়ার পতন। আর বাজার খোলার ঘন্টাখানেকের মধ্যেই তো Sensex একধাক্কায় 4000 পয়েন্ট নীচে নেমে গেল। হ্যাঁ একদম ঠিকই শুনেছেন।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
একটানা বিক্রির চাপে এবার মুখ থুবড়ে পড়লো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রধান ভরসার জায়গা শেয়ার মার্কেট। কিন্তু কেন এত বড় ধ্বস নামলো? আসলে কী ঘটনা ঘটেছে? আবারও কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে ভারতের শেয়ার মার্কেট? চলুন একটু আলোকপাত করি এই রক্তাক্ত পরিস্থিতির পিছনে পাঁচটি বড়সড় কারণ সম্পর্কে, যা বিনিয়োগকারীদের কপালে সকাল সকাল চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে শেয়ার বিক্রির ঝড়
সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন শুল্ক নীতি চাপিয়ে দিয়েছে প্রত্যেকটি দেশের উপর। যা গোটা বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারকে আরো আতঙ্ক করে দিয়েছে। ট্রাম্পের মতে, “এটি একটি ওষুধের মত। কষ্টকর হলেও সবার প্রয়োজন।” আর এই ওষুধের কোপে পড়েই এশিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপ, এমনকি আমেরিকার বড় বড় সূচকগুলি কার্যত গুড়িয়ে গিয়েছে। Nasdaq 20% এর পতনে শেয়ার মার্কেটের মুখ আরও থুবড়ে পড়েছে (Share Market Crash)। ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতিতে এই ধাক্কা তারাও সামাল দিতে পারল না।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
ট্রাম্পের ট্যারিফ
বর্তমানে 180টির বেশি দেশের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত বাজারকে চরম অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, এখনো বাজারে সেই প্রভাব পুরোপুরি দেখা যায়নি। তবে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। এমনটাই আশা করছে বিশেষজ্ঞরা। Emkay Global নামের এক বিশেষজ্ঞ বলছেন, “ট্যারিফের পরোক্ষ প্রভাব হয়তো ভারতের উপর সীমিত। কিন্তু আমেরিকায় যদি একবার মন্দ দেখা যায়, তাহলে ভারতের শেয়ার বাজার আরো বড়সড় ধাক্কা (Share Market Down) খেতে পারে।”
প্রবৃদ্ধি নিয়ে বড়সড় উদ্বেগ
বর্তমানে শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বিশ্বজুড়ে উৎপাদন খরচ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে। যার ফলে কমছে লাভের পরিমাণ এবং বাড়ছে খরচের প্রবণতা। JP Morgan নামের এক বিশেষজ্ঞ বলছেন, “বিশ্বজুড়ে মন্দার আশঙ্কা এখন 40% থেকে 60%-এ গিয়ে ঠেকেছে। ভারতের ক্ষেত্রেও প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে Goldman Sachs যা 6.3% থেকে নেমে গিয়ে 6.1%-তে পৌঁছে গিয়েছে। অর্থাৎ, মন্দার ছায়া এখন ভারতের উপরেও ঘনিয়ে আসছে।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পিছু হটা
বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এতটাই ভয় ছড়িয়ে গিয়েছে যে, তারা সমস্ত শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে এবং এর ফলে বিদেশী পুঁজি বাজার ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। শুধু এপ্রিল মাসেই প্রায় 13,730 কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে বিদেশী সংস্থাগুলি। হ্যাঁ অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি। এর ফলে বাজারে তারতম্য কমে গিয়ে পতনের গতি আরো রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে।
রিজার্ভ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত ও কর্পোরেট ফলাফল
আগামী 9ই এপ্রিল আসছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটির সিদ্ধান্ত। ভারতের বাজার এখন আশা করছে সুদের হারে কিছুটা হলেও ছাড় মিলবে। অন্যদিকে 10ই এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে চতুর্থ ত্রৈমাসিক ফলাফল প্রকাশ। আর সেখানে প্রথমেই থাকছে TCS-এর রিপোর্ট। আর এই ফলাফল এবং কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার দিকনির্দেশনা বাজারকে সামাল দিতে কিছুটা সাহায্য করতে পারে। তবে শেয়ার বাজার মুখ থুবড়ে পড়ার (Share Market Crash) পিছনে এটি অন্যতম এক কারণ।
বিনিয়োগকারীদের প্রতি পরামর্শ
দেখুন, শেয়ার বাজারের ওঠানামা নতুন কিছু নয়। কিন্তু আজকের এই পতন ছিল একেবারে অপ্রত্যাশিত এবং বিনিয়োগকারীদের কল্পনার বাইরে। বিশ্ব রাজনীতির প্রভাব যেভাবে ভারতীয় অর্থনীতিকে কাঁপাতে পারে, আজকের সকালটা হয়তো তারই বড় প্রমাণ। তবে এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছে ঘাবড়ে নয়, বরং বুঝে শুনে বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়াই সবথেকে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।