প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ভরা মাঘ মাসেও নেই শীতের দেখা। শুধু মাঘ নয় পৌষ মাসেও কার্যত জাঁকিয়ে শীতের দেখা পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ তো ইতিমধ্যেই লেপ কম্বল তুলতে শুরু করে দিয়েছেন। দরকার পড়ছে না আর টুপি, সোয়েটারের। গোটা শীতের মরশুম এবার কোনোভাবে একপ্রকার কেটেছে। তাপমাত্রা কোনো কোনো দিন নিম্নমুখী থাকে তো কোনো কোনো দিন আবার ঊর্ধ্বমুখী থাকে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার দাপটে রীতিমত নাজেহাল অবস্থা রাজ্যবাসীর। আর এই জলবায়ু পরিবর্তনের এক বড় প্রভাব দেখা গেল ৬টি ঋতুর ওপর।
আমাদের সাথে যুক্ত হন
Join Now
বসন্ত ঋতু ক্রমেই বিলুপ্ত হচ্ছে!
গত পাঁচ দশকের তথ্য সূত্রে দেখা গিয়েছে যে, যত সময় এগোচ্ছে ততই ভারতে শীতের প্রভাব কমছে। যার ফলে গরমের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি ঋতুর ওপর এক বিরাট প্রভাব পড়ছে। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্লাইমেট সেন্ট্রালের গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দেখা গিয়েছে, প্রতি বছর শীতের মাসে অঞ্চলভেদে তাপমাত্রার ব্যাপক তারতম্য হচ্ছে। এমন উদাহরণও আছে অনেক। উদাহরণস্বরূপ, মণিপুরে একধাক্কায় ২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে যেখানে কিনা দিল্লিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ০.২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই আবহে আরও একটি জিনিষ নজরে এসেছে। এবং সেটি হল শীতের পরবর্তী ঋতু বসন্তের স্থায়িত্ব অনেকটাই কমে যাচ্ছে।
মোটামুটি জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাস পেরিয়ে মার্চ এপ্রিল থেকেই বসন্তের (Spring) আগমন হয়। এই সময় সকালের দিকে হালকা শীত শীত থাকে তবে বেলা গড়াতেই এক মনোরম আবহাওয়া থাকে। কিন্তু আবহাওয়াবিদদের মতে সেই বসন্তের অস্তিত্ব এখন একদমই দেখা যাচ্ছে না। যার অন্যতম কারণ হল দীর্ঘস্থায়ী শুষ্ক আবহাওয়া এবং উচ্চ তাপমাত্রা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি ছিল রেকর্ডের তৃতীয় উষ্ণতম মাস। এই সময়ের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বাড়ছে গরমের প্রভাব
১৯০১ সালের পর এটি ছিল চতুর্থ শুষ্কতম মাস, যা এটিকে সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে শুষ্কতম শীতকালীন মাসগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে। কিন্তু বছরের পর বছর দেখা যাচ্ছে ফেব্রুয়ারিতেই তাপমাত্রা এপ্রিলের মতো অনুভূত হতে শুরু করেছে। দিনের পর দিন ঋতুর এই পরিবর্তন পরিবেশে এক ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনছে। শুধু বসন্তই নয়, বর্ষাকালে কমছে বৃষ্টির দাপট এমনকি শীতের মরসুমেও দেখা যাচ্ছে না শীত। প্রতিটা ঋতুতেই এখন গরমের প্রভাবটাই বেশি চোখে পড়ছে। আর এই সমস্যার অন্যতম মূল কারণ হিসেবে উঠে আসছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং।
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হিমালয় অঞ্চল বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তুষারপাত এর প্রভাবও বেশ কমে গেছে। জম্মু ও কাশ্মীরে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শ্রীনগরের আঞ্চলিক আবহাওয়া কেন্দ্রের পরিচালক মুখতার আহমেদ বলেন, শীত দ্রুত কমে আসছে। এখানে এখন খুবই কম তুষারপাত হয় এবং গত তিন সপ্তাহ ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। যার দরুন অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত স্থায়ী শীতকাল এখন কেবল ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ হয়েছে।