বর্তমান সময়ে অনেকেই সহজে অনলাইনে আয় বা বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজে থাকেন। কিন্তু এই সুযোগের আড়ালেই লুকিয়ে থাকে প্রতারণার জাল। সম্প্রতি আলোচনায় উঠে এসেছে Treasure NFT নামক একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বহু মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন মোটা মুনাফার আশায়। কিন্তু এখন সেই স্বপ্ন কার্যত চুরমার হয়ে গিয়েছে। গ্রাহকরা বলছেন, টাকা উইথড্রল সম্ভব হচ্ছে না, এবং বহু বিনিয়োগকারী আজ চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।
এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ, বিশেষত বানারহাট থানার ইনস্পেক্টর-ইন-চার্জ **বিরাজ মুখোপাধ্যায়**, জনগণকে সতর্ক করেছেন Treasure NFT-সহ এই ধরনের ভুয়ো বিনিয়োগ প্রকল্প থেকে দূরে থাকার জন্য।
পঞ্জি স্কিম আসলে কী?
পঞ্জি স্কিম হলো একটি প্রতারণামূলক বিনিয়োগ পরিকল্পনা, যেখানে পুরনো বিনিয়োগকারীদের মুনাফা দেওয়া হয় নতুন বিনিয়োগকারীদের টাকা দিয়ে। বাস্তবে এই স্কিমের পেছনে কোনও প্রকৃত ব্যবসা বা উৎপাদনের উৎস থাকে না। এর নাম এসেছে চার্লস পঞ্জি নামক এক ইতালিয়ান ব্যবসায়ীর কাছ থেকে, যিনি ১৯২০ সালে আমেরিকায় এই প্রতারণার যাত্রা শুরু করেন।
চার্লস পঞ্জি প্রচার করেন, ডাকটিকিট ব্যবসার মাধ্যমে তিনি ১০০ দিনে দ্বিগুণ রিটার্ন দিতে পারবেন। সঙ্গে ছিলেন রেফারেল কমিশনের লোভ। এই প্রলোভনে পড়েই বহু মানুষ তার ফাঁদে পা দেন।
আধুনিক পঞ্জি স্কিমের রূপ
আজকের দিনে পঞ্জি স্কিম আরও আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়েছে। অনেক কোম্পানি এখন বলে, “মেম্বারশিপ নিন”, “দুই-একজনকে রেফার করুন”, “প্রোডাক্ট কিনলে কমিশন পাবেন” — এসবের পেছনে মূল উদ্দেশ্য থাকে সদস্য সংগ্রহ এবং নতুন বিনিয়োগকারীর অর্থ দিয়ে পুরনোদের টাকা ফেরত দেওয়া। বাস্তবে কোনও কার্যকর পণ্য বা পরিষেবা থাকে না।
Treasure NFT-র প্রতারণার অভিযোগ
Treasure NFT-কে ঘিরে তৈরি হয়েছে চরম বিতর্ক। অনেকে ভেবেছিলেন এটি একটি প্রকৃত NFT (Non-Fungible Token)-ভিত্তিক বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে উচ্চ মুনাফার পাশাপাশি রেফারেল কমিশনের সুযোগও আছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার হয়ে গেছে, এটি একটি পঞ্জি স্কিমের আদলে তৈরি প্ল্যাটফর্ম। এখন ব্যবহারকারীরা বলছেন, টাকা তো উঠছেই না, অনেকের লগইনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট বলছে, Treasure NFT কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে যারা এই প্ল্যাটফর্মে বিপুল পরিমাণে অর্থ লগ্নি করেছিলেন, তারা আজ আর্থিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
পঞ্জি স্কিম চেনার সহজ উপায়
বিশেষজ্ঞরা কিছু লক্ষণ জানিয়েছেন, যা দেখলেই বুঝতে পারবেন এটি পঞ্জি স্কিম:
1. অস্বাভাবিক রিটার্নের প্রতিশ্রুতি – যেমন ১০০ দিনে টাকা দ্বিগুণ।
2. রেফারেল বা রিক্রুটমেন্ট কমিশন – নতুন লোক আনলেই কমিশন।
3. পণ্য বিক্রির আড়ালে সদস্য সংগ্রহ – বাস্তব পণ্যের চেয়ে সদস্য বাড়ানোতেই বেশি গুরুত্ব।
4. প্রকৃত ব্যবসার অভাব – যদি প্ল্যাটফর্মের কোনও সঠিক ব্যবসা বা উৎপাদনের উৎস না থাকে।
Treasure NFT এবং এ ধরনের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ করার আগে ভালভাবে যাচাই-বাছাই করা অত্যন্ত জরুরি। “সহজে টাকা রোজগার” বা “দ্রুত রিটার্ন”-এর মতো লোভনীয় অফারগুলির ফাঁদে পা না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। সতর্ক থাকুন, নিরাপদ থাকুন।