প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: সুপ্রিম–সিদ্ধান্তে রাজ্যের এসএসসি (SSC) নিয়োগ কান্ডে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মী এই মুহূর্তে চাকরিহারা। প্রবল সংকটের মুখে রয়েছে এই চাকরিহারাদের ভবিষ্যৎ। একদিকে শিক্ষকের অভাবে স্বাভাবিক পঠনপাঠন চালানো যেমন দুষ্কর হয়ে পড়েছে স্কুলগুলির পক্ষে, ঠিক তেমন ভাবেই সকল চাকরিহারাদের ব্যক্তিগত জীবনেও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। সেই কারণেই নিজেদের হকের দাবি লড়তে রাজ্যজুড়ে একের পর এক বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে রাজ্যবাসী।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
পুরোনো কর্মক্ষেত্রে কাজের নির্দেশ শীর্ষ আদালতের
এদিকে ২০১৬ সালের এসএসসির গোটা প্যানেল বাতিল করার সময় সুপ্রিম কোর্ট চাকরিহারাদের একটি স্বস্তি সংবাদ দিয়েছিল। আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছিল, চাকরিহারাদের মধ্যে যোগ্য প্রার্থীরা তাঁদের পুরোনো কর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতে পারবেন। কিন্তু তা নিয়েও অনেকের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা গিয়েছে। ঠিক এমনই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সদ্যই চাকরিহারা শিক্ষিকা সুনেত্রা সেনগুপ্ত এর কাছে। তিনি কেষ্টপুরের বাসিন্দা। ২৬ বছর বয়সে ২০০৯ সালে প্রথম এসএসসি দিয়ে পুরুলিয়ার প্রান্তিক স্কুলে চাকরি পেয়েছিলেন। এরপর ২০১৬ সালে ফের এসএসসিতে বসেন সুনেত্রা। সেবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের একটি স্কুলে চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু যদি তাঁকে পুরোনো কর্মক্ষেত্রে ফিরতে হয় তাহলে তাঁকে সেই পুরুলিয়ায় আবার ফিরতে হবে, যা খুবই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কী বলছেন শিক্ষক শিক্ষিকারা?
এই প্রসঙ্গে সুনেত্রা সেনগুপ্তও বলেন, “আমার উপরেই ছ’বছরের মেয়ের দায়িত্ব। বাড়িতে প্রবীণ বাবা–মা, শ্বশুর–শাশুড়ি আছেন। কর্মক্ষেত্রের দূরত্বটা কমাবো বলেই তো ২০১৬–র এসএসসিতে বসেছিলাম। চাকরিও পেয়েছিলাম কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সবটাই শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন কী করব বুঝতে পারছি না।” তবে এই সমস্যা শুধু সুনেত্রা দেবীর নয়, পশ্চিম বর্ধমানের একটি স্কুলের একাদশ–দ্বাদশের শিক্ষক সুনীল ঘোষেরও। তিনিও এসএসসি দিয়ে প্রথম চাকরি পেয়েছিলেন ২০০৯ সালে। বাড়ি থেকে কাছে পোস্টিং পাওয়ার জন্য চারবার এসএসসি দিয়েছিলেন। ২০০৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত প্রতিবারই এসএসসি পাশ করার পরে দূরে পোস্টিং হচ্ছিল বলে তিনি জয়েন করেননি। শেষে সুনীল ঘোষ ২০১৬ সালে কাছাকাছি স্কুলে পোস্টিং হওয়ায় তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
জানা গিয়েছে শিক্ষক সুনীল ঘোষের বাড়ি থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে ছিল স্কুলটি। সেখানে তাঁর পদোন্নতিও হয়, তিনি জয়েন করেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সবটাই শেষ। এখন বয়স হয়ে যাওয়ায় তারপক্ষে কিছুতেই পুরোনো স্কুলে জয়েন হতে পারবেন না তিনি। সুনীল বলছেন, ‘পুরোনো স্কুলে ফিরে যেতে হলে সেই জার্নি করার মতো শক্তি এখন নেই। তাই ঠিক করেছি ১৬ অথবা ১৭ এপ্রিল সমস্ত কাগজপত্র স্কুল শিক্ষা দপ্তরে জমা করে আসব।’ অন্যদিকে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ থেকে বিটিএ, প্রধান শিক্ষকদের নানা সংগঠন থেকে পুরোনো কর্মস্থল নিয়ে বার বার চিঠি–মেল পাঠিয়েও কোনও উত্তর পাচ্ছেন না। এমন ৪২৩ জন শিক্ষক–শিক্ষাকর্মী আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সব দিক খতিয়ে দেখে এই আবেদনকারীদের পুরোনো কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় শীর্ষ–আদালত।তবে বিকাশ ভবনের এক সূত্রের দাবি, যতদিন না কোনও ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে, ততদিন এই প্রক্রিয়া শুরু করা মুশকিল।