সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: ভারতে সোনার খনি (Gold Mines) বলতে এতদিন আমরা কোলার বা অন্য কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের নামই বুঝতাম। তবে এবার দেশের স্বর্ণের মানচিত্রে নতুন সংযোজন হিসেবে উঠে এসেছে উড়িষ্যা। হ্যাঁ একদম ঠিকই শুনেছেন। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিপুল পরিমাণে সোনার ভান্ডারের হদিশ মিলেছে। ফলে এবার উড়িষ্যা হয়ে উঠতে পারে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্বর্ণখনি কেন্দ্র।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
কোথায় কোথায় মিলেছে সোনার হদিস?
উড়িষ্যার খনিজ এবং খনন মন্ত্রী বিভূতিভূষণ জেনা সম্প্রতি বিধানসভায় এই সোনার খনির হদিস পাওয়া নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রাথমিক গবেষণা মারফত জানা গিয়েছে সুন্দরগড়, নবরংপুর, আঙ্গুল ও কোরাপুট জেলার বেশ কিছু বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সোনার বিশাল মজুত রয়েছে। এর পাশাপাশি মলকানগিরি, সংবলপুর ও বৌদ্ধ জেলাগুলিতেও সোনার খনি থাকার সম্ভাবনা দেখা গিয়েছে।
ময়ূরভঞ্জে বিশাল স্বর্ণভান্ডার
বিশেষ করে উড়িষ্যার ময়ূরভঞ্জ জেলার বেশ কিছু এলাকায় সোনার উপস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বেশ কিছু সূত্র বলছে, জশিপুর, সুরিয়াগুডা, রুয়ানসি, ইডেলকুচা, মারেদিহি, সুলেপাত ও বাদামপাহাড় অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে সোনার হদিস মিলেছে। এর আগে দেবগড় জেলার আদাসা-রামপল্লী অঞ্চলে ভারতীয় ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা বা GSI তামার অনুসন্ধান চালানোর সময় সোনার খনির সামান্য ইঙ্গিত পেয়েছিল। এবার তা আরো গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
প্রথমবারের জন্য নিলামে উঠছে স্বর্ণখনি
উড়িষ্যা সরকার এই বিপুল সম্পদকে কাজে লাগানোর জন্য এক বড়সড় সিদ্ধান্তের পথে হাঁটছে। রাজ্যের ইতিহাসে এই প্রথমবার সোনার খনিকে ব্লক নিলামে তোলা হচ্ছে। জানা যাচ্ছে, দেবগড়ের একটি স্বর্ণখনিকে প্রথম নিলামের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে, যা রাজ্যের খনি শিল্পের নতুন এক অধ্যায় হতে চলেছে। এছাড়া কেওনঝড় জেলার গোপুর-গাজিপুর, মঙ্কদচুয়া, সালেকানা ও দিমিরিমুন্ডা অঞ্চলে আরো প্রচুর পরিমাণে সোনা মজুত রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই এলাকাগুলির খনিজ মূল্য নির্ধারণ করে পরবর্তী ধাপে এগোনোর পথে হাঁটছে এবার রাজ্য সরকার।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন এক দিগন্ত
উড়িষ্যার সোনার এই বিপুল সন্ধান রাজ্যের অর্থনীতিতে ইতিমধ্যেই নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে। বেশ কিছু সুত্র বলছে, স্বর্ণখনির বাণিজ্যিক উৎপাদন যদি একবার শুরু হয়, তাহলে বিনিয়োগের নতুন দিক খুলে যাবে। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের প্রচুর সুযোগ তৈরি হবে এবং রাজ্যের রাজস্ব আয়ও বহুগুণদের বেড়ে যাবে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, নিলাম সম্পন্ন হওয়ার পর দ্রুত খনন কাজ শুরু করা হবে। তবে এর পাশাপাশি নতুন এলাকাগুলিতেও অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে, যাতে আরো বেশি পরিমাণে স্বর্ণভান্ডারের হদিস পাওয়া যায়।
স্বর্ণখনির মানচিত্রে উড়িষ্যা
এই বিপুল পরিমাণে স্বর্ণভান্ডারের হদিস মেলার পর উড়িষ্যা ভারতবর্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক স্বর্ণখনি রাজ্যে পরিণত হতে চলেছে। কোলার গোল্ড ফিল্ডের পর এবার উড়িষ্যা তার বিপুল খনিজ সম্পদের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। তবে আগামী দিনে এই স্বর্ণখনিগুলিকে বাস্তবে কীভাবে কাজে লাগানো হবে, সেদিকে নজর থাকবে গোটা দেশবাসীর। যদি এখানে থেকে বাণিজ্যিকভাবে সত্যিই সোনা উত্তোলন করা শুরু হয়, তাহলে ভারতের অর্থনীতিতে এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।