সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: নববর্ষ মানেই নতুন স্বপ্ন। কিন্তু এবার নববর্ষের প্রথম দিনেই যেন স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল টিটাগড়ের লুমটেক্স জুটমিলের (Titagarh Jute Mill) ১২৫০ জন শ্রমিকের। হ্যাঁ, গোটা রাজ্য যখন সকালবেলা মেতে উঠেছে নববর্ষের আনন্দে, তখনই আচমকা মিলের গেটে ঝুলে গেল এক নোটিশ- “জুটমিল বন্ধ করা হয়েছে।” কার্যত মুহূর্তের মধ্যেই তাদের জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
হঠাৎ করেই কর্মহীন ১২৫০ শ্রমিক
শ্রমিকদের অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে তাদের উপর অতিরিক্ত কাজ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। বিশেষ করে স্পিনিং বিভাগে একজনের জায়গায় দুজনের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিল মিল কর্তৃপক্ষ। নববর্ষের দিনেও সেই বাড়তি কাজ চাপিয়ে দেওয়া হয়। আর এই নিয়ে শ্রমিকদের এক বড় অংশ প্রতিবাদ জানায়। কেউ কেউ তো কাজে যোগ দিতে অস্বীকারও করেন। আর সেই প্রতিবাদের আগুন নেভাতে কোন আলোচনার পথ খোলা না রেখেই মিল কর্তৃপক্ষ আচমকা গোটা কারখানা বন্ধ করে দেয়।
জীবনের লড়াইয়ের সম্মুখীন শ্রমিকরা
শ্রমিকদের অধিকাংশ অভিযোগ করছে, দীর্ঘদিন ধরেই মিলের তরফ থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি, এমনকি মজুরিও ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছিল না। আর এই দাবিগুলির সুরহা না করেই তাদের হঠাৎ ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে। বহু শ্রমিক পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন এই কারখানার সঙ্গে যুক্ত। ফলে এখন তাদের সংসার চালানো কার্যত দায় হয়ে পড়েছে।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিকদের মধ্যে দড়ি টানাটানি
কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের তরফে ওমপ্রকাশ সাউ বলেছেন, শ্রমিকদের অনুরোধ করা হয়েছিল কাজে যোগ দিতে। কিন্তু তারা রাজি হয়নি। আমরাও চাই মিল স্বাভাবিকভাবে চলুক। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, যাতে বাধ্য হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় কাউন্সিলর তথা তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের নেতা শীষনারায়ণ সিং বলেছেন, শ্রমিক এবং মালিকপক্ষের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। আমি চাই আলোচনার মাধ্যমে তারা এই সমস্যা মিটিয়ে নিক। মিল বন্ধ হয়ে যাওয়া একদমই কাম্য নয়।
শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে…
বর্তমানে টিটাগড়ের গোটা এলাকা জুড়ে শ্রমিকদের উদ্বেগের হাওয়া বইছে। এই মুহূর্তে সবথেকে বড় প্রশ্ন, এতগুলি শ্রমিক এবং তাদের পরিবার এবার কীভাবে জীবন চালাবে? প্রশাসনের তৎপরতা এবং দ্রুত সমাধান ছাড়া এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। এখন দেখার শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।