সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: একে তো রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি আলোচনার শিরোনামে, আর তারই মাঝে আবারও থমকে গেল বহুল আলোচিত ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বাতিল মামলার (Primary Recruitment Case) শুনানি। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে সরে দাঁড়ালেন বিচারপতি সৌমেন সেন। এখন আবারও নতুন প্রশ্ন উঠতে পারে এই মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
বিচারপতির সরে দাঁড়ানোর ফলে মামলার শুনানি স্থগিত
হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের অন্যতম সদস্য বিচারপতি সৌমেন সেন আজ জানান, তিনি আর এই মামলার শুনানির সঙ্গে যুক্ত থাকবেন না। তিনি মূলত ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েই নিজেকে সরিয়ে নেন। তবে মামলাটি তিনি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি. এস. শিবজ্ঞানমের কাছে পাঠিয়ে দেন নতুন বেঞ্চ নির্ধারণের জন্য। এই ঘটনায় মামলাকারীরা যেমন একদিকে হতাশ হয়ে পড়েছে, তেমনই উদ্বেগে ভুগছেন হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী, যাদের ভবিষ্যৎ এই মামলার রায়ের উপরে নির্ভর করছিল।
কোথা থেকে শুরু হয়েছিল এই মামলাটি?
আসলে ২০২৩ সালের মে মাসে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিল। সেখানে প্রায় ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল বাতিল করা হয়। বিচারপতির অভিযোগ ছিল, যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ এবং নম্বরের ভিত্তিতে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়নি।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
পরবর্তী সময়ে রাজ্য সরকার এই নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে পুনরায় আপিল করেছিল। যখন মামলাটি চূড়ান্ত শুনানির দিকে এগোচ্ছিল, ঠিক সেই সময় বিচারপতি সৌমেন সেনের সরে দাঁড়ানো আবারও নতুন করে জলঘোলা সৃষ্টি করলো।
মামলাকারীদের অভিযোগ
আদালতের নির্দেশ মেনে নাম্বার বিভাজনের তালিকা প্রকাশের পর দেখা যায়, অনেক অপ্রশিক্ষিত প্রার্থী যারা কম নাম্বার পেয়েছেন, তারাও চাকরির সুপারিশপত্র পেয়েছেন। হ্যাঁ, এমনটাই অভিযোগ তুলেছিল মামলাকারীরা। অপরদিকে যোগ্য এবং প্রশিক্ষিত প্রার্থীরা বাদের খাতায় পড়ে গিয়েছিল। আর এই অভিযোগের ভিত্তিতেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কড়া সিদ্ধান্তের পথে হেঁটেছিল।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ২৬ হাজার চাকরি বাতিল!
এই মামলার শুনানির আগে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আরো একটি বড়সড় রায় দিয়ে ফেলেছে। যেখানে রাজ্যের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের প্যানেল বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। আর সেই রায় ইতিমধ্যেই রাজ্যের শিক্ষা মহলে তীব্র আলোচনা সৃষ্টি করেছে। প্রাথমিকের মামলাটিও এবার সেই সূত্রে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভবিষ্যতে কী হতে চলেছে?
বিচারপতি সৌমেন সেনের সরে দাঁড়ানোর ফলে মামলাটি আপাতত স্থগিত রয়েছে। প্রধান বিচারপতি নতুন করে কোন বিচারপতির বেঞ্চে মামলাটিকে পাঠান এবং শুনানি কবে হয়, সেইদিকেই নজর থাকবে গোটা রাজ্যবাসীর। কারণ এই মুহূর্তে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে চাইছেন চাকরিপ্রার্থীরা। ভবিষ্যতে এই জল কত দূর গড়াবে সেটাই এখন দেখার।