শ্বেতা মিত্র, কলকাতা: মেক ইন ইন্ডিয়ার লক্ষ্যে আরও এক ধাপ এগোতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এবার বুলেট ট্রেনের আগেই খুব শীঘ্রই হয়তো ভারতে হাইড্রোজেন ট্রেনকে (Hydrogen Train) চলতে দেখা যাবে। হ্যাঁ একদম ঠিক শুনেছেন। না পেট্রোল, বিদ্যুৎ না ডিজেল, শুধুমাত্র এবার জলের সাহায্য চলবে ট্রেন। ভারত তার প্রথম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোজেন ট্রেন চালু করতে প্রস্তুত, যা কেবল প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রতীকই হবে না বরং দেশের সবুজ ভবিষ্যতের দিকে একটি বড় পদক্ষেপও প্রমাণিত হবে। এই ট্রেনটি পরিবেশ সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি আধুনিক ভারতের গতি আরও ত্বরান্বিত করবে, যা প্রতিটি ভারতীয়ের জন্য গর্বের বিষয়।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
কবে ট্র্যাকে নামবে হাইড্রোজেন ট্রেন?
ভারত তার প্রথম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোজেন ট্রেন চালু করতে প্রস্তুত। এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন যে এই ট্রেন কবে ট্র্যাকে নামবে? সূত্রের খবর, এই ট্রেনটি ২০২৫ সালের জুনের পরে ট্র্যাকে চলাচলের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতীয় রেলপথ মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পটি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য নিযুক্ত রয়েছে। এর আগে এই ট্রেনটি ২০২৪ সালের জুনের আগে চালু করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল কিন্তু পরীক্ষার সময় প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে এর তারিখ পিছিয়ে যায়।
২০২৩-২৪ সালের বাজেটে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই ট্রেনটি চালু করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। হাইড্রোজেন জ্বালানিতে চালিত এই ট্রেনটি পরিবেশের কোনও ক্ষতি ছাড়াই সবুজ শক্তির এক নতুন যুগের সূচনা করবে।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হবে হাইড্রোজেন ট্রেন
চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি (ICF) ভারতের প্রথম হাইড্রোজেন চালিত ট্রেন তৈরি করছে। এই ট্রেনটি সম্পূর্ণরূপে ভারতে ডিজাইন এবং তৈরি করা হচ্ছে। হাইড্রোজেন জ্বালানিতে চলা ট্রেনগুলির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল যে তারা মোটেও দূষণ করে না। এই ট্রেনে, একটি বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন মিশিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হবে, যা ট্রেনটি চালাবে। এই ট্রেন থেকে কেবল জলীয় বাষ্প বের হবে, অর্থাৎ এটি কোনও দূষণ সৃষ্টি করবে না এবং পরিবেশের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ হিসাবে বিবেচিত হবে। এই নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে হাওয়া পরিষ্কার থাকবে এবং ডিজেল ও পেট্রোলের মতো জ্বালানির উপর নির্ভরতাও কমবে।
কোন রুটে চলবে?
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের মতে, ভারতের এই হাইড্রোজেন ট্রেনটি কেবল দেশের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য ঐতিহাসিক হবে। এই ট্রেনটি হবে বিশ্বের দীর্ঘতম (১০টি কোচ) এবং সবচেয়ে শক্তিশালী (২৪০০ কিলোওয়াট) হাইড্রোজেন ট্রেন। এই প্রকল্পটি ভারতীয় রেলের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে এবং ট্রেনের প্রযুক্তি এবং নকশা গবেষণা, নকশা এবং মান সংস্থা (RDSO) দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। ভারতের প্রথম হাইড্রোজেন ট্রেনটি উত্তর রেলওয়ের দিল্লি বিভাগ দ্বারা নির্মিত হচ্ছে এবং এটি হরিয়ানার ৮৯ কিলোমিটার দীর্ঘ জিন্দ-সোনিপত রুটে চলবে। যদিও এই ট্রেনের ভাড়া সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
রেল সূত্রে আবার এও জানা যাচ্ছে, কালকা-সিমলা হেরিটেজ রুটেই প্রথম এই ট্রেন চালু হবে। ৯৬ কিলোমিটার এই রুটে হাইড্রোজেন ট্রেন চরম তাপমাত্রাতেও ছুটতে পারবে। ২৬৩৮ জন যাত্রী বহনের ক্ষমতা রয়েছে এই ট্রেনের। ৫ ডিগ্রি থেকে ৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা পর্যন্ত ২২০০-রও বেশি যাত্রী নিয়ে এই ট্রেন সিঙ্গেল সেলেই কালকা থেকে সিমলার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবে।
কত গতি হবে হাইড্রোজেন ট্রেনের?
ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার গতিবেগ হাইড্রোজেন ট্রেনের। তবে পার্বত্য উপত্যকায়, চরম আবহাওয়ায় এই গতিতে ছোটা যথেষ্ট উদ্বেগের। এর জন্য হাইড্রোজেন ট্রেনের নতুন প্রোটোটাইপে আরও বড় ফুয়েল সেল বসানো হবে।১২০০ হর্সপাওয়ারের হাইড্রোজেন ইঞ্জিন থাকবে এই ট্রেনে। এটাই বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী হাইড্রোজেন ট্রেন হতে চলেছে।