বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: কাশ্মীর অর্থাৎ POK অঞ্চল নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়েছিল বহু আগেই। পুরনো ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, ব্রিটিশরা ভারত ছাড়ার আগে ধর্মের ভিত্তিতে এদেশকে দু খন্ডে আলাদা করে যায়। যার মধ্যে একটি ভারত অন্যটি পাকিস্তান।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
ধর্মের ভিত্তিতে দুই দেশ ভাগ হলেও পথের কাঁটা হয়ে থেকে যায় কাশ্মীর। যা নিয়ে পরবর্তীতে একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও POK অঞ্চলে বাড়তে থাকা উত্তেজনা প্রশমন করা সম্ভব হয়নি। আর এই যাবতীয় ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল যে ভুলে, সেই বিশেষ সিদ্ধান্ত এতদিন সবকিছুর আড়ালে চলে গেলেও পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর তা নিয়ে আবার শুরু হয়েছে জল্পনা।
POK তৈরির গোড়ার কথা…
ব্রিটিশরা ভারত ছাড়ার আগে অখন্ড ভারতকে ধর্মের ভিত্তিতে দুই খন্ডে ভাগ করেছিল। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য পাকিস্তান, এবং হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মালম্বীদের জন্য ভারত। গোটা ঘটনা জানতে ফিরছি অতীতে। অখন্ড ভারতে সে সময় কমপক্ষে 565টি ছোট প্রিন্সলি স্টেট ছিল। প্রত্যেক স্টেটের একজন রাজা বা নবাব থাকতেন। স্বাধীনতার আগে এই স্টেট গুলির নবাবদের কাছে একটি প্রস্তাবনা যায়। তাঁদের জানানো হয়, তাঁরা তাঁদের পছন্দের ভিত্তিতে দুই দেশের মধ্যে যেকোনও একটি দেশ বেছে নিতে পারেন। আবার কেউ চাইলে স্বাধীন ভাবেও থাকতে পারেন।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
ঠিক এই সময়ে প্রথমদিকে ভারতের সাথে জুড়তে রাজি হয়েছিলেন অনেকেই। অনেকেই আবার পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হতে চেয়েছিলেন। এই পর্বে দাঁড়িয়ে বিকানের মহারাজা সর্দার সিং সবার প্রথমে ভারতের সাথে জুড়তে রাজি হন। তাঁর অভিজ্ঞতা ছিল, পড়শি পাকিস্তানের সাথে থাকার থেকে ভারতের সাথে যুক্ত হয়ে লাভের ভাগ অনেকটাই বেশি। জানিয়ে রাখি, প্রথমবারের মতো সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ও সচিব ভিপি মেনন প্রিন্সলি রাজ্যগুলিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। আর সেই সময়ে সমর্থনে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও অন্তিম ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন।
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের উদ্যোগে আধুনিক ভারতের মানচিত্র তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল। বলা বাহুল্য, সেবার সচিবের সাথে দীর্ঘ বৈঠকের পর নরমে গরমে অবস্থানে বেশিরভাগ প্রিন্সলি স্টেটগুলির সাথে ভারতের বড় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইন্সট্রুমেন্ট অফ অ্যাক্সেসেশন সই করিয়ে রাজ্যগুলির প্রতিরক্ষা ও বিদেশ নীতির মতো বিষয়গুলি এখনও কেন্দ্র ধরে রেখেছে। তবে সব ঠিক থাকলেও হায়দরাবাদ, জুনাগড় ও কাশ্মীরের মতো রাজ্যগুলি ভারতের সাথে জুড়তে বেঁকে বসে। এই সময়ে সমস্যা সমাধানে হাত লাগিয়েছিলেন সেই বল্লভভাই প্যাটেলই।
1948 সালে স্বাধীনতার পর অপারেশন পোলোর মাধ্যমে হায়দরাবাদকে ভারতের সাথে যুক্ত করা হয়। এছাড়াও জুনাগড় যুক্ত হয় গণভোটের দৌলতে। এরপর একে একে সব প্রিন্সলি স্টেট ভারতের সাথে যুক্ত হলেও রাজি হয়নি শুধু কাশ্মীর। সে অঞ্চলের বেশিরভাগ মুসলিম বসবাসকারী মানুষজন শাসক মহারাজা হরি সিংয়ের অধীনে ছিলেন। হিন্দু রাজা হরি সিং চেয়েছিলেন কাশ্মীর কে স্বাধীন রাখতে। তবে সেই কাজ একেবারে সহজ ছিল না। কাশ্মীর প্রভিন্সের উপত্যকা ও মুজাফফরবাদ জেলার অন্তত 90 শতাংশ এলাকায় মুসলিম জনগণের বসবাস ছিল। ফলত একাধিক সমস্যার মাঝে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে শুরু করে। জানা যায়, 1947 সাল নাগাদ পাকিস্তানের পশতুন উপজাতির হামলাকারীরা কাশ্মীর আক্রমণ করে বসলে আবহ আরও জটিল হয়।
সূত্রের যা খবর, এই সময়ে পাকিস্তানের বহু সেনা আধিকারিকরা কাশ্মীরের এই অঞ্চলটি দখল করতে চেয়েছিলেন। আর ঠিক সেই মোক্ষম সময়ে পাকিস্তানের হাত থেকে বাঁচতে তড়িঘড়ি ভারতের সাথে ইন্সট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন স্বাক্ষর করতে রাজি হয়ে যান হরি সিং পরিবর্তে ভারতের কাছ থেকে সামরিক সাহায্য দাবি করেন হরি সিং। পরে কথামতো ভারতের সাথে কাশ্মীর যুক্ত হয়ে গেলে সরকার কাশ্মীরে সেনা পাঠায়।
ভারতের সাথে কাশ্মীর যুক্ত হওয়ায় একেবারে খেপে লাল হয়ে যায় পাকিস্তান। চলে নানান ছলচাতুরি। কাশ্মীর দখল করতে উঠে পড়ে লাগে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী সংগঠন। এরপর একাধিক ছক কষে 1948 সালের মে মাসে আচমকা কাশ্মীর আক্রমণ করে বসে পাক সেনা। যার দৌলতে 1108 জন ভারতীয় জওয়ান শহীদ হন। হতাহতের সংখ্যা কমপক্ষে 3100 ছাড়িয়েছিল। এরপরই ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের কবজা থেকে জম্মু ও কাশ্মীরকে রক্ষা করে। অন্যদিকে পাক সেনা তাদের গিলগিট-বাল্টিস্তানকে দখলে রাখে। জানিয়ে রাখা ভাল, সেবারের ভয়াবহ সংঘর্ষ বলা চলে কাশ্মীর যুদ্ধে 6000 পাক সেনাও প্রাণ হারিয়েছিল।
নেহরুর ভুল!
ভারতের সাথে যুদ্ধ চলাকালীন উপত্যকায় সেনা বা অস্ত্রশস্ত্র না পাঠিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহরু সরাসরি রাষ্ট্রসংঘের দ্বারস্থ হন, সেই সাথেই মধ্যস্থতার দাবি করেন। নেহেরুর এমন কাজের পরই শুরু হয় বিতর্ক। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক দ্বন্দ্বকে রাষ্ট্রসংঘের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে সবটা একেবারে আন্তর্জাতিক মহলে খোলসা করে দিয়েছিলেন তিনি। আর এখানেই সুবিধা পেয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। 1989 সালের জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্র সংঘের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরোধী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তৈরি হয়েছিল লাইন অফ কন্ট্রোল।
অবশ্যই পড়ুন: ‘এক কথায় প্রাইভেট জেট পাঠায় শাহরুখ’, KKR-র অজানা কাহিনী শোনালেন আকরাম
আর এই LOC পাকিস্তানকে দু ভাগে ভাগ করে দেয়। সেখানেই তৈরি হয় ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর ও পাক অধিকৃত কাশ্মীর বা POK। যদিও পরবর্তীতে কাশ্মীর কার সাথে থাকতে চায় সে নিয়ে রাষ্ট্রসংঘ একটি গণভোটের আয়োজন করেছিল। তবে তা আজ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। মূলত এমন ঘটনার পর থেকেই POK তৈরির নেপথ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে দায়ী করে আসছেন অনেকেই।