প্রীতি পোদ্দার, নয়া দিল্লি: মনে পড়ে ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনা? এখনও সেই ঘটনা সকলের মনে এক চিরস্থায়ী দাগ ফেলে রেখেছে। সেবার মুম্বইয়ের আটটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হামলা চালায় পাকিস্তান থেকে আগত ১০ লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গিরা। এই ভয়ংকর জঙ্গি হামলায় নিহতের সংখ্যা ছড়িয়েছিল প্রায় ১৬৬ জন এবং বহু মানুষ আহত হন। আর এই ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তাহাউর রানা (Tahawwur Rana)।
গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়তে জয়েন করুন
Join Now
বর্তমানে তাহাউর রানা ২৬/১১ হামলার ঘটনায় আমেরিকার জেলে বন্দি রয়েছেন। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তাঁকে ভারতে প্রত্যর্পণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নয়াদিল্লি। কিন্তু নানারকম আইনি বাঁধা এবং বিড়ম্বনার মাঝে সেই পরিকল্পনা বারংবার পিছিয়ে যাচ্ছে। এমনকি মুম্বই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত ডেভিড কোলম্যান হেডলির সঙ্গী রানাকে পাওয়ার জন্য প্রায় দেড় দশক আগে ওয়াশিংটনের কাছে আবেদন জানিয়েছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু তাতে সায় মেলেনি। উল্টে তাঁর জামিন হয়ে যায়। কিন্তু ২০২০ সালের জুন মাসে মুম্বই নাশকতার ঘটনাতেই ফের রানাকে গ্রেফতার করেছিল আমেরিকার পুলিশ। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালতে রানার তরফে জামিনের আবেদন জানানো হলেও বছর দেড়েক আগে তা খারিজ হয়ে গিয়েছিল।
এরপর দ্বিপাক্ষিক বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে আবার তাহাউর রানাকে আমেরিকার থেকে ফেরত চায় ভারত। কিন্তু কোনোভাবেই ভারতে আসতে রাজি নন রানা। যার ফলে সে প্রথমে নিম্ন আদালতে, তার পরে ওয়াশিংটনের প্রাদেশিক আদালতে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আবেদন করেন। কিন্তু কোথাও তাঁর ভাগ্য সহায় দিলেন না। এমনকি সান ফ্রান্সিসকোর আপিল আদালতেও ভারতে প্রত্যর্পণের পক্ষেই রায় গিয়েছিল। এরপর গত ২৫ জানুয়ারি ২৬/১১ হামলার অন্যতম চক্রী রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের অনুমতি দিয়েছিল আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট। আর তাতেও বিপুল চাপের মুখে পড়েন রানা।
বাছায় করা খবর নিজের মোবাইলে পেতে
Join Now
আবেদনে কী জানান রানা?
এরপর আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে ভারতে প্রত্যর্পণের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্য বৃহস্পতিবার আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাহাউর রানা। এবং আবেদনপত্রে লিখেছিলেন যে, ‘‘আমি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এবং মুসলিম। তাই আমি যদি ভারতে যাই তাহলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আমার উপর অত্যাচার চালাবেন। যদি এই প্রত্যর্পণ স্থগিত করা না হয়, তাহলে মার্কিন আদালতের এক্তিয়ার থাকবে না এবং আমি শিগগিরই মারা যাব।’’ এছাড়াও রানার আইনজীবী আরও জানান যে, এইমুহুর্তে তিনি নানা শারীরিক অসুস্থতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
সিদ্ধান্তে অনড় আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট
এদিন রানার আইনজীবী বলেন, তিনি একাধিকবার হার্ট অ্যাটাক, পার্কিনসনস ডিজিজ, ব্লাডার ক্যানসারের আশঙ্কা, স্টেজ ৩ ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, অ্যাজমা এবং কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই ভারতীয় জেলে বন্দি হওয়া তার জন্য ‘প্রকৃত অর্থে মৃত্যুদণ্ড’ হবে বলে তিনি মনে করেন। কিন্তু তাহাউর রানার কোনো আবেদন ধোপে টিকল না। শুক্রবার আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের নবম সার্কিটের বিচারপতি প্রত্যর্পণের নির্দেশ দ্রুত পুনর্বিবেচনার জন্য রানার আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ আগের নির্দেশই বহাল থাকছে। এবং তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া কার্যত নিশ্চিত হল বলেই মনে করা হচ্ছে।
রাজ্য রাজনীতি, বিনোদন থেকে শুরু করে খেলা সংক্রান্ত নানা ধরনের খবরের লেটেস্ট আপডেট পেতে এখনই ফলো করুন আমাদের India Hood Bangla কে।