প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে বিশুদ্ধ জল পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ২০১৯ সালে কেন্দ্র সরকার ‘জল জীবন মিশন’ প্রকল্প চালু করেছিল। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্প পরিচিত ‘জল স্বপ্ন’ নামে। তবে গত বছর থেকে কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে এই প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যার ফলে রাজ্যের চিন্তা আরও বাড়ে। কেন্দ্রের সহযোগিতা ছাড়াই এবার দ্বিগুণের বেশি অর্থ ব্যয় করে জল স্বপ্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চলেছে রাজ্য সরকার।
কেন বন্ধ কেন্দ্রের বরাদ্দ?
নিয়ম অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির জন্য খরচের অর্ধেক কেন্দ্র এবং বাকি অর্ধেক রাজ্য সরকার বহন করে। তবে পশ্চিমবঙ্গের অভিযোগ, জল স্বপ্ন সহ একাধিক প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্র সরকার অর্থ বরাদ্দ আটকে রেখেছে। আবাস যোজনা, গ্রামীণ সড়ক যোজনা, ১০০ দিনের কাজ, সমস্ত প্রকল্প এই তালিকায় রয়েছে। জল স্বপ্ন প্রকল্পে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে এক টাকাও দেয়নি কেন্দ্র।
নবান্ন সূত্রে খবর, গত বছরের আগস্ট মাসেও কেন্দ্র এবং রাজ্যের যৌথ অর্থায়নে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল এই প্রকল্পে। কিন্তু নভেম্বর মাসে রাজ্য সরকার নিজেদের অংশের ১২৫০ কোটি টাকা দিলেও কেন্দ্র সরকার সমপরিমাণ টাকা দেয়নি। এর ফলে ‘জল স্বপ্ন’ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ আরো দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়।
দ্বিগুণের বেশি অর্থ বরাদ্দ করল রাজ্য
কেন্দ্রের সহযোগিতা না পেলেও জল স্বপ্ন প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর। নতুন অর্ধবর্ষে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের বাজেটে দ্বিগুনের বেশি অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। গত বছর যেখানে এই প্রকল্পের জন্য ৪.৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, এবার সেই প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১১ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, কেন্দ্রের সাহায্যে ছাড়াই রাজ্য নিজস্ব কোষাগার থেকেই প্রকল্পটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
কী বলছে কেন্দ্র সরকার?
২০২৪ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য থাকলেও দেশের একাধিক রাজ্যে এখনো কাজ অনেকটাই বাকি। তাই কেন্দ্র সরকার এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় বাজেটে ৬৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ফলে রাজ্য সরকার আশাবাদী যে, এবার পশ্চিমবঙ্গ এই প্রকল্পের জন্যে কেন্দ্রের সাহায্য পাবে।
কেন্দ্রের একটি রিপোর্ট বলছে, ইতিমধ্যে ১১টি রাজ্যে জল জীবন মিশনের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। আরো ১৭টি রাজ্যে প্রকল্পের কাজ ৭৬.৪৩ শতাংশ থেকে ৯৭.২৭% এগিয়ে গেছে। তবে পশ্চিমবঙ্গে এই অগ্রগতির পরিমাণ মাত্র ৫৪.৬৪%। কেন্দ্রীয় অর্থ আটকে যাওয়াকেই এই ধীরগতির অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
এখন দেখার, কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে রাজ্য আদৌ কোন রকম বরাদ্দ পায় কিনা, নাকি রাজ্যের অর্থায়নেই এই প্রকল্প সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হবে।