গরমের মরসুমের চাপে ইতিমধ্যেই নাজেহাল গোটা দেশবাসী। এর মধ্যেই একটি নতুন বিতর্ক জন্ম দিয়েছে স্মার্ট মিটার প্রকল্প (Smart Meter)। বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে আরো আধুনিক এবং স্বচ্ছ করতে কেন্দ্র সরকার স্মার্ট মিটার চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু গোটা দেশজুড়ে এই মিটার লাগানোর বিরোধিতা করছে সাধারণ মানুষ। বাংলাও তার ব্যতিক্রম নয়।
দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিশেষত উত্তরপ্রদেশ, বিহার, গুজরাট, তামিললাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় স্মার্ট মিটার বসানোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে বিদ্যুৎ কর্মচারী সংগঠন, সবাই এই প্রযুক্তির বিরোধিতা করছে। তাহলে স্মার্ট মিটার সত্যিই মানুষের জন্য সমস্যা নিয়ে আসছে? চলুন দেখে নিই বিস্তারিত।
স্মার্ট মিটার কী এবং কেন বিতর্ক?
স্মার্ট মিটার হল একটি উন্নত প্রযুক্তির বৈদ্যুতিক মিটার, যা ম্যানুয়াল রিডিং-এর পরিবর্তে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ খরচের রেকর্ড লিপিবদ্ধ করবে। সরাসরি বিদ্যুৎ সংস্থার সার্ভারের সেই ডেটা পাঠিয়ে দেবে এই স্মার্ট মিটার। এর ফলে বিদ্যুতের অপচয় কমবে এবং সঠিক বিলিং নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ চুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
তবে অনেক গ্রাহক মনে করছে, স্মার্ট মিটার লাগানোর পর থেকে বিদ্যুতের বিল বেড়ে গেছে। মিটার রিডিং বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে মিটার পাঠকদের চাকরি হারানোর সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে। অনেক গ্রাহকের অভিযোগ যে, বিনা অনুমতিতে বা জোর করে তাদের বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসিয়ে দিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এছাড়া হঠাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা সামনে আসছে।
দেশজুড়ে স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
বিহারে স্মার্ট মিটার লাগানোর পরপরই বহু গ্রাহক তাদের বাড়তি বিদ্যুৎ বিল নিয়ে অভিযোগ করেছে। উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে। সেখানে বিক্ষোভকারীরা সরাসরি বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করেছে। গুজরাট এবং তামিলনাড়ুতে পথে নেমেছে সাধারণ মানুষ।
পশ্চিমবঙ্গেও স্মার্ট মিটার বসানো নিয়ে ক্রমেই বিতর্ক বেড়ে চলেছে। কলকাতা, বারাসাত, মধ্যমগ্রাম, কল্যাণী সহ বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষ অভিযোগ করছে, তাদের অনুমতি ছাড়াই জোর করে স্মার্ট মিটার বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
রাজ্য সরকার কী বলছে?
বাংলায় স্মার্ট মিটার বসানোর বিষয়ে ইতিমধ্যে একাধিক বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, এখনো পর্যন্ত রাজ্যে প্রায় ১.২৫ লক্ষ স্মার্ট মিটার বসানো হয়েছে। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ দপ্তর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, প্রথম পর্যায়ে সরকারি দপ্তর এবং সংস্থাগুলিতে স্মার্ট মিটার বসানো হবে। কিন্তু পরবর্তীতে কিছু বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বাড়িতেও এই মিটার বসানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এতে সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছে।
ভবিষ্যতে কী হতে পারে?
সরকার স্মার্ট মিটার প্রকল্পের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ইতিমধ্যে খতিয়ে দেখা শুরু করেছে। যদিও এই প্রযুক্তি দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে। তবে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ দূর করা এখন সরকারের কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ।